এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়া এবং

 

চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষার্থী আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এদেরকে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, যে বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, সেই বিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হলো কেন? শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করানো হয়েছে নাকি শিক্ষকের অদক্ষতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি? অকৃতকার্য করানোর প্রসঙ্গ তখনই আসে, যখন কোন কোন শিক্ষকের প্রাইভেট পড়ানোর বাণিজ্য রমরমা করতে কুটকৌশল ফুটে ওঠে। শিক্ষাজীবনে একটি বছর কেড়ে নেয়ার হোঁচট অনেকেই সামলাতে পারে না। ছিটকে পড়ার শঙ্কা থেকেই যায়। যদিও কেউ কেউ ঘুরেও দাঁড়ায়। সে সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য নয় কি?

নির্বাচনী পরীক্ষা নাকি টেস্ট? এ পরীক্ষা নিশ্চয় অকৃতকার্যকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা নয়, এ পরীক্ষা মূলত চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি। তাই যদি হয় তা হলে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার অর্থ কি? বিদ্যালয় থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শতভাগের কৃতিত্ব দেখানোর জন্য যদি অকৃতকার্যদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়া হয়, তা হলে তাদেরকে কেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বা যোগ্য করে তোলা হলো না? দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল মুত্তালিব অভিন্ন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাবদ সরকারকে গুণতে হয় লাখ লাখ টাকা, সেই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে কি শিক্ষা দেন? দক্ষতার সাথে শিক্ষাদান অবশ্যই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো যোগ্য করে তোলে। যে শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হয়েছে, তারা কোন কোন বিষয়ে অকৃতকার্য হলো তা দেখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকমণ্ডলির বিরুদ্ধে কি তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি। উল্টো বলা হচ্ছে, অকৃতকার্যরা এক বছর পর পরীক্ষায় অংশ নিলে ওরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো যোগ্য হবে। হায়রে যুক্তি! এখনও যেহেতু কয়েক মাস সময় রয়েছে সেহেতু অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের দুর্বল বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়ে দক্ষ করারও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলো না। অথচ কোচিং নামের বাণিজ্যের প্রস্তুতি ঠিকই চলছে। কোচিং কাদের জন্য?

নানাভাবেই শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করে দেখা গেছে, কোনো শিক্ষার্থীর চেয়ে কোনো শিক্ষার্থীর মেধার তফাতটা খুব বেশি নয়। তারাই মেধাবী বলে বিবেচিত হয়, যারা কঠোর অধ্যবসায় আর লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে। টমাস আলভা এডিসনের কালজয়ী উক্তি, ‘প্রতিভার একভাগ প্রেরণা, নিরানব্বই ভাগ কঠিন পরিশ্রম।’ তা হলে বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে ভর্তি করার পর কী এমন হলো যে, তারা এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলো? অবশ্যই বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়ার কথিত গৌরবের লোভে কোনো শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একটি বছর কেড়ে নেয়া বা তাদেরকে লেখাপড়ায় অনাগ্রহ সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি গড়ে তোলারও কোনো অধিকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের আছে কি? একটু ভেবে দেখবেন ধর্মাবতা!

Leave a comment