চুয়াডাঙ্গার দুটি সাঁতার ক্লাবের কর্ণধার আশরাফুল হক বলেন
বখতিয়ার হোসেন বকুল: সাঁতার শুধু উত্তম ব্যয়ামই নয়, নদীমাতৃক দেশে সাঁতার শেখা খুবই জরুরি। সাঁতার শিখতে ক’দিন লাগে? সকলে সাঁতার শেখে না কেন? নাকি পারে না? এসব প্রশ্নের জবাব জানতে চুয়াডাঙ্গার দুটি সাঁতার ক্লাবের কর্ণধার দামুড়হুদা দশমীর আশারফুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন- নদ-নদী পুকুর নালা, খাল-বিলে যারা শিশুকাল থেকে ডুব দিয়ে গোসুল করে তাদের সাঁতার শেখা অনেকটা সহজাতের মতো, আর অন্যদের ক্ষেত্রে একটু অন্যরকম হলেও কঠিন নয়। কী রকম?
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা দশমীর মৃত আজিজুল হকের ছেলে আশরাফুল হক জাতীয় বিকেএসপির একাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাঁতার প্রশিক্ষক। তিনি সীমান্ত ও চুয়াডাঙ্গা সুইমিং ক্লাবের মূল দায়িত্বে রয়েছেন। এ ক্লাব দুটিতে বর্তমানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে অর্ধশত সদস্য রয়েছে। সদস্যদের মধ্যে প্রশিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিতরা বছর বছর জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দামুড়হুদা বাজারপাড়ার সোমাইয়া খাতুন জাতীয় বালক/বালিকা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদকও পেয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় দামুড়গহুদার সাবিনা ও আলপোনার রয়েছে স্বর্ণ ও রূপা পদক। এরা চুয়াডাঙ্গা সুইমিং ক্লাবেরই সদস্য। এদের প্রশিক্ষক আশরাফুলসহ ক্লাবের অভিজ্ঞ সদস্যরা। সাঁতার না জানার কারণে নানা বয়সেরই নারী-পুরুষের সলিল সমাধির খবর পত্রপত্রিকায় উঠে আসে। সম্প্রতি ডা. বেলাল উদ্দীন ও কলেজ শিক্ষক তথা প্রভাষক কেতকীর কলেজপড়ুয়া ছেলে ধ্রুবর মৃত্যু এলাকার দায়িত্বশীল অভিভাবকদের নাড়া দিয়েছে। সাঁতার না জানা শিশু-কিশোর যুবক-যুবতীদের মধ্যেও সাঁতার শেখার তাগিদ অনুভূত হয়েছে। এ তাগিদ থেকেই চুয়াডাঙ্গায় সাঁতার শেখার বিষয়ে সাঁতার প্রশিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
সাঁতার শেখা প্রসঙ্গে নানা প্রশ্বের জবাব দিতে গিয়ে প্রশিক্ষক আশরাফুল হক বললেন, ডুব দিয়ে যাদের গোসুলের সুযোগ নেই, সাওয়ার অথবা বালাত- টবের পানিতেই যাদের গোসুল সারতে হয় তারা সাঁতার জানবে কীভাবে? যারা সাঁতার জানে না, তাদের সাঁতার শিখতে অথবা শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখাতে দেড় দু সপ্তাই যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে, শুধু সাঁতার শেখার ক্ষেত্রেই নয়, সর্বক্ষেত্রেই জানা বা শেখার জন্য ইচ্ছে শক্তি প্রয়োজন। যে যা জানতে যতো আগ্রহী সে ততো তাড়াতাড়ি তা জানতে বা শিখতে পারে।
সাঁতার শেখার সময় নিরাপত্তা? বাড়তি সতর্কতাই যথেষ্ট। যারা সাঁতার জানে না, তাদেরকে প্রথমে বোর্ড দিয়ে পানিতে ভাসতে শেখানো হয়। বোর্ডের ওপর ভেসে হাত পা নেড়ে পানিতে কীভাবে চলাচল করতে হয় তা শেখাতে মন্ত্র লাগে না। তবে কিছুটা কৌশলের তো প্রয়োজন রয়েছেই। কৌশল রপ্ত করতে নবীন সাঁতারুর খুব বেশি সময় লাগে না। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে অবশ্যই প্রথমে অল্প ও পরিষ্কার পানিতে নামানো হয়। সুইমিংপুল না থাকায় কাঁদামুক্ত পুকুরকেই সুইমিং পুল হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। দামুড়হুদার কোষাঘাটাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশ ক’টি পুকুর রয়েছে, যেখানে অনেক শিশু-কিশোরকেই সাঁতার শিখিয়েছি, শেখাচ্ছি। যারা আমার কাঁছে আসে না, তাদেরকে কলার ভেলা ধরে ভাসতে শেখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সকলকেই বলে থাকি- ভালো থাকতে হলে ভেলা ধরে হলেও পানিতে ভাসতে শিখুন।
চুয়াডাঙ্গায় সুইমিং ক্লাব ও সাতারু সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে- একাধিক প্রশিক্ষণে দক্ষ প্রশিক্ষক আশরাফুল হক বললেন, দুর্ভাগ্য আমাদের। আমাদের চুয়াডাঙ্গায় সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়নি। আমরা চুয়াডাঙ্গার সুইমিং ক্লাব থেকে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর নিয়মিতভাবে অংশ নিই। অথচ আমাদের জেলায় সুইমিং পুল নির্মাণের আগে যে জেলার কেউ সাঁতারে অংশ নেন না, সে সব জেলায় সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়েছে। যা দুঃখজনক। সাঁতার শেখা ও শেখানোর জন্য সুইমিং পুল খুবই উপযোগী। চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়া সংস্থার সেদিকে নজর আছে বলে মনে হয় না। সে কারণেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়ামান হক জোয়ার্দ্দারকে চুয়াডাঙ্গায় সুইমিং পুল নির্মাণে আশু পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাতে চাই। একই সাথে সকল দায়িত্বশীল অভিভাবককে তাদের সন্তানকে সাঁতার শেখানোর জন্য সামান্য সময় ব্যয়ামের অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ০১৭১৪৪৪৩২৫০ যোগাযোগ করুন। পানিতে নামতে কিছুটা কষ্ট হলেও সাঁতার শিখুন।