এসএসসির ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাইরে বিলম্ব ফি ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের বাড়তি ফি নেয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ নেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। আদালতের এ পদক্ষেপ চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রবণতা রোধে সহায়ক হোক।
প্রতি বছর বিষয় প্রতি ফি নির্ধারণ করা হলেও প্রায় সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইচ্ছেমতো ফি দাবি করে। কয়েক গুণ বেশি ফি আদায়ের কারণে স্বল্প আয়ের অভিভাবককে পড়তে হয় মহাবিপাকে। কেন বাড়তি ফি আদায়? বিদ্যালয় প্রধান সরাসরি প্রকাশ্যে তেমন যুক্তি দেখাতে না পারলেও গোপনে বলে থাকেন, দফায় দফায় বোর্ডে যেতে হয়। আসা-যাওয়া খরচের পাশাপাশি শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তাদের খুশি করার ব্যাপার থাকে। ওসব টাকা কোথায় পাবে বিদ্যালয়?
বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির ফলে একদিকে সেবা গ্রহীতার জন্য শিক্ষার ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে শিক্ষার মান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত হয়। শিক্ষা খাতের দুর্নীতির প্রভাব অনেকটাই স্থায়ী হয় এবং তা ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। শিক্ষার্থীরা দুর্নীতির সাথে পরিচিত হলে তার প্রভাব আজীবন থাকে। এ অবস্থার অবসানে দুর্নীতিকে মানসম্মত শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শন, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রকাশ ও তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সততার অঙ্গীকারে আবদ্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দুর্নীতির প্রসার যেমন দুঃখজনক, তেমনি হতাশাজনকও বটে। দুর্নীতির সাথে দেশের শিক্ষক সমাজের জড়িত হয়ে পড়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক সমাজ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে জাতির আর ভরসা করার জায়গা থাকে কোথায়?