ডা. শামারুফ মেহজাবিন কনা ছিলেন সচেতন পরিবারের সন্তান। বিয়ের পর যে পরিবারে তিনি পুত্রবধূ হিসেবে প্রবেশ করেন ওই পরিবারকেও অসচেতনতার অন্ধকারাচ্ছন্ন বলা চলে না। স্বামী আইনজীবী, শ্বশুর সাবেক সংসদ সদস্য, শাশুড়ি চিকিৎসক। এমন একটি পরিবারে ডা. কনাকে অকালেই লাশ হতে হলো কেন? কনার পিতার অভিযোগ, শারীরিক নির্যাতনে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আড়ালে এফসিপিএস অর্জন। যৌতুক প্রসঙ্গও অপ্রাসঙ্গিক নয়। যদিও স্বামীপক্ষের অভিযোগ, আত্মহত্যা।
আত্মহত্যা কেন? ডা. কনা কি পেটের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি? নাকি মস্তিষ্ক বিকৃত রোগে ভুগছিলেন তিনি? দুটির একটিও স্বামীপক্ষ জোর দিয়ে বলেনি। গ্রামবাংলার বধূর রহস্যজনক মৃত্যু হলে বেমালুম বলা হতো, পেটের যন্ত্রণা বা মানসিক রোগী ছিলো। পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরকম অপমৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনেও তেমন আগ্রহ দেখায় না। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে পদস্থ কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হলে দু-একটি ঘটনা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারকে নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়। ডা. কনার ক্ষেত্রে? কনার পিতার জোর দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে, মামলা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এরপরও স্বামীর পিতার রাজনৈতিক ক্ষমতা শেষ পর্যন্ত পুলিশকে কতোটা দায়িত্বশীল রাখতে পারবে তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। দেশের বাস্তবতায় এ সন্দেহ অমূলক নয়। ধনীর ঘরের পুত্রবধূকে হত্যা করা না হলেও তাকে যে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করা হয়ে থাকতে পারে তাও খতিয়ে দেখার দাবি অযৌক্তিক নয়। গতপরশু স্বামীর ঢাকার বাসায় লাশ হন ডা. কনা। গতকাল পিতার যশোরস্থ বাড়িতে লাশ নেয়া হয়। গতকালই দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
অবশ্যই সকল অপমৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচন করা দরকার। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে সমাজে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হ্রাস পায়। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে অপরাধ প্রবণতা। একজন চিকিৎসক তার সচেতন স্বামীগৃহে লাশ হলেন। এরকম মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ড পারিবারিক হলেও সমাজের স্বার্থেই যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের পেশাদারত্বের দৃষ্টি দিয়েই দেখা দরকার। হত্যা বা আত্মহত্যায় প্ররোচনা যাই হোক, দৃষ্টান্তমূলক বিচার কাম্য।