বখতিয়ার হোসেন বকুল: পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মুনিয়া নামের মেয়েটির বয়স মাত্র ১২ বছর ৬ মাস। এ বয়সে মুনিয়া চুলে লাল ফিতে বেঁধে রঙিন জামা পরে তার সহপাঠীদের সাথে স্কুলে যাবে আর আগান-বাগান ঝাঁপিয়ে বেড়াবে এটাই স্বাভাবিক। সংসার সম্পর্কে সে এখন কোনো কিছুই বোঝে না অথচ জন্মনিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে তাকে অনেকটা জোর করেই বসানো হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। এমন ছেলে নাকি তারা আর পাবে না? তাই আজ শুক্রবার দামুড়হুদা গোপিনাথপুরের আদালত হোসেনের মেয়ে মুনিয়ার চলেছে বাল্যবিয়ের আয়োজন। কিন্তু এ বাল্যবিয়েতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুনিয়ার সহপাঠীরা। তারা এ বাল্যবিয়ে বন্ধসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন। জানিয়েছেন জোর প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই বাল্যবিয়ে বন্ধ থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রতিবাদকারী মুনিয়ার সহপাঠীদের।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আদালত হোসেনের মেয়ে মুনিয়া খাতুন স্থানীয় গোকুলখালী কওমী মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। পারিবারিকভাবে আজ শুক্রবার একই ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে তার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এ বাল্যবিয়ের কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে মুনিয়ার সহপাঠী ও সমবয়সীরা মুনিয়াকে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। মুনিয়ার সহপাঠীরা দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমানের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে। বিষয়টি জানতে পেরে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে এবং ভুয়া জন্মনিবন্ধন না দিতে জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীকে নির্দেশ দেন।
এদিকে গ্রামের সচেতনমহল বলেছে, সরকারি আইন অমান্য করে গ্রামের এক শ্রেণির প্রভাবশালীমহল প্রভাব খাটিয়ে প্রতিমাসেই এ ধরনের বাল্যবিয়ে দিয়ে চলেছেন। গত মঙ্গলবার একই গ্রামের ফতে আলীর মেয়ে ফাতেমা খাতুন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে গ্রামেরই চাচাতো ভাইয়ের সাথে বাল্যবিয়ে পড়িয়েছেন ওই ইমাম সামসুদ্দীন। এলাকার সচেতনমহল বাল্যবিয়ে বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকার প্রভাবশালী মাতবরেরা আইনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম সামসুদ্দীনের সহযোগিতায় কাবিন ছাড়াই শাদা কাগজে একের পর এক বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নিকট এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, বাল্যবিয়ের সাথে জড়িতদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক যেন কেউ আর বাল্যবিয়ের আয়োজন করতে সাহস না দেখায়।