স্টাফ রিপোর্টার: যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমীকে (২৮) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খান টিপু সুলতান, তার স্ত্রী জেসমিন আরা ও ছেলে হুমায়ুন সাদাব মিলে মাহজাবীনকে হত্যা করে। এ অভিযোগ করেছেন সুমীর বাবা প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম।
তবে খান টিপু সুলতান ও তার পরিবার বলছে, ডা. মাহজাবীন আত্মহত্যা করেছেন।
ডা. মাহজাবীন ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ১৪ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে পান্থপথের সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার পরই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গলার দুই পাশে কালো দাগ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম রয়েছে।
মাহজাবীন যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার প্রকৌশলী নূরুল ইসলামের মেয়ে। নূরুল ইসলাম খবর পেয়ে যশোর থেকে ঢাকায় রওনা দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর বিমানবন্দরে বসে তিনি জানান, মাহজাবীন এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস করছিল। ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতানের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় হুমায়ুন নিজেকে ব্যারিস্টার পরিচয় দেয়। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রকৃতপক্ষে সে ব্যারিস্টার নয়। এমনকি বারে তালিকাভুক্ত কোনো অ্যাডভোকেটও নয়। হুমায়ুন সাদাব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করা।
নূরুল ইসলাম আরও বলেন, বিয়ের পর থেকে মাহজাবীনের পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাকে দিয়ে তিন বেলা রান্না করানো, কাপড় ধোয়া, বাসা মোছা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করাত। যৌতুকের জন্য দফায় দফায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। বিয়ের সময় তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ফার্নিচারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র যৌতুক দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও ফার্নিচারের জন্য তার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে ২ লাখ টাকার ফার্নিচার, ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজ, সোয়া লাখ টাকা দিয়ে এসিসহ আরও বিভিন্ন পণ্য যৌতুক হিসেবে দেন। এরপরও তার মেয়েকে নানাভাবে মারধর ও নির্যাতন করত। সর্বশেষ সকালেও (বৃহস্পতিবার) মেয়ে ফোন করে তার ওপর নানা নির্যাতনের কথা জানায়।
নূরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মাহজাবীনকে হত্যার পর লাশ অন্য হাসপাতালে না নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয় বিশেষ কারণে। তা হল, শাশুড়ি জেসমিন সুলতান সেখানে চাকরি করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হিসেবেই লাশ সেন্ট্রালে নেয়া হয়। এখনও তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, খবর পেয়ে থানা ও বাসায় পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে ময়নাতদন্তের জন্য।
যশোর ব্যুরো জানায়, মাহজাবীনের চাচা আমিনুল ইসলাম বলেন, ডা. মাহজাবীন এফসিপিএস পরীক্ষা দিতে চাইলেও তাকে বারবার বাধা দেয়া হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি কখনো চাইতো না ও এফসিপিএস কোর্স সম্পূর্ণ করুক। বিভিন্ন সময়ে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর-শাশুড়ি-ছেলে মিলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বাথরুমে ঝুলিয়ে রাখে। পরে হাসপাতালে নেয়ার নাটক করে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান। তিনি বলেন, দুপুরে ডা. মাহজাবীন বাথরুমে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার পর তার পরিবারের স্বজনদের জানানো হয়েছে। থানায় নিজে খবর দিয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। সে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক আসলে ঘটনা কী। আমরা কোনো কিছু গোপন করিনি।