জরাজীর্ণ ভবনে চলছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম : পরিদর্শন করলেন হুইপ
স্টাফ রিপোর্টার: ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত বিল্ডিঙে চলছে চুয়াডাঙ্গা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। দুশ বছরের পুরাতন এ ভবনটি ধসে পড়ে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেই সাথে নষ্ট হতে পারে কোটি কোটি টাকার দলিল ও বালাম বই। এ তথ্য পেয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকসহ রেজিস্ট্রারের আহ্বানে গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস পরিদর্শন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। তিনি ভগ্নদশা ভবন দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যতো দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দারের সাথে এ সময় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল ও প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। হুইপ ভবনের বর্তমান দশা দেখে বলেন, যেহেতু সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়টি ভাড়ায় নেয়া ভবন, সেহেতু ভাড়ায় দেয়া ব্যক্তিকে নতুন ভবন নির্মাণের তাগিদ দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জমি কিনে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। ইতঃপূর্বে যখন যোগাযোগ করেছিলাম, তখন জমি কিনে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ রাজি ছিলো না। ভবনের যে দশা তা দেখে মনে হচ্ছে, দ্রুত আবারও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।
জানা গেছে, অল্প বৃষ্টিতে ছাদ চুয়ে পানি পড়ায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে কোন রকম রক্ষা করা হচ্ছে মূল্যবান কাগজপত্র। এছাড়াও জায়গা সংকটের কারণে গাদাগাদি করে চলছে অফিসের কার্যক্রম। জমি কেনা-বেচা রেজিস্ট্রি করতে আসা মহিলাদের জন্য নেই কোনো টয়লেট ও বিশ্রামাগার। ইতোমধ্যে দোতালার ছাদের কিছু অংশের কড়ি-বড়গা-পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগ এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ রবিউল ইসলাম সড়কে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর ডা. মালেকের পিতা প্রায় দুশ বছর পূর্বে সদৃশ্য ভবনটি তৈরি করেন। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে এ ভবনে শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা সদর রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। বয়সের ভারে ভবনটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যা বর্তমানে বসবাসের অযোগ্য। তার পরও ৮০ বছর ধরে চলছে এখানে রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম।
চুয়াডাঙ্গা সদর অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার আবদুস সাত্তার বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। অল্প বৃষ্টিতে ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। অনেক স্থান ভেঙে পড়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে দলিল। অল্প জায়গায় অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের গাদাগাদি করে কাজ করতে হয়। ফাটল ধরা পুরাতন ভবনে সপ্তায় রোববার ও সোমবার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলে। এই দু দিন শ শ মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে রেজিস্ট্রি অফিস চত্বর। উপায় না থাকায় অনেকটা ভয়, শঙ্কা আর ঝুঁকি নিয়েই চলছে কর্যক্রম। তাই যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পাড়ে আলোচিত রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা।
অফিস সহকারী অর্চনা বিশ্বাস বলেন, এখানে ৪০/৪২ জন কর্মচারী কাজ করে থাকি। জায়গার সংকুলান থাকার পাশাপাশি বিদুত না থাকলে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ১৮০ জন দলিল লেখকদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ভবন চত্বরে টিনের দু চালা ঘরে ঠাসাঠাসি করে তাদের কাজ করতে হয়। কখনও কখনও অল্প বৃষ্টিতেই দলিল লেখার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে আসা নারী-পুরুষের বিশ্রামগার ও টয়লেট না থাকায় নানান সমস্যায় পড়তে হয়।
গণপূর্ত বিভাগ ইতোমধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানো চলছে দৈনন্দিন কার্যক্রম। অবিলম্বে পুরাতন ভবন থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নতুন ভবনে স্থানান্তর হবে, একই সাথে মূল্যবান এ সকল দলিল রক্ষা পাবে এমনটাই দাবি চুয়াডাঙ্গাবাসীর।