ডাকাতদের ভয়ে নাগদার একটি পরিবার গ্রামছাড়া : এলাকায় আতঙ্ক

আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারীতে বোমার আঘাতে নিহত বৃদ্ধর দাফন সম্পন্ন

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: গত সোমবার রাতে আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারী গ্রামে সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমার আঘাতে নিহত গৃহকর্তা মুসারদ্দির লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় চলছে সন্ত্রাস আতঙ্ক। সন্ত্রাসীরা সোমবার রাত ১২টার দিকে ছোটপুটিমারী গ্রাম সংলগ্ন নাগদাহ ক্যানালপাড়ার এক দুধব্যবসায়ীর বাড়িতে ঢোকে। চরমপন্থি পরিচয় দিয়ে তারা পানি খেতে চায়। এ সময় বাড়ির লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করলে গ্রামের লোকজন ছুটে আসে। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায়। এবার পার পেলেও পরের বার পরিবারের লোকজনসহ তোদেরকে হত্যা করা হবে। সন্ত্রাসীদের দেয়া হুমকিতে পরিবারটি নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

জানা গেছে, গত সোমবার রাত সোয়া ১টার দিকে আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের ছোটপুটিমারী গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে মুসার উদ্দিন ওরফে মুসারদ্দির (৬৫) বাড়িতে দুর্বৃত্তরা বাড়ির গেট ঝাঁকিয়ে লোকজনকে ডাকতে থাকে। এ সময় মুসারদ্দি গেটের কাছে এলে তাকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা বোমা মারে। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন প্রথমে তাকে মুন্সিগঞ্জ প্রতিজ্ঞা নার্সিং হোমে নেয়া হয় এবং পরে ওই রাতেই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকা রেফার করলে রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে বেলা আড়াইটার দিকে তার লাশ গ্রামে পৌঁছুলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গতকাল মুসারদ্দির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৫টার দিকে গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয় বলে এলাকাসূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে নিহতের বড় ছেলে আফিল উদ্দিন জানান, আমার পিতা বাড়ির গেটের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। রাতে একদল সন্ত্রাসী বাড়ির গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকে। আব্বা উঠে মাকে ডাকতে থাকেন। মা আব্বাকে ঘরের মধ্যে আসতে বলেন। কিন্তু তিনি গেটের কাছে গিয়ে গেটের ফাঁক দিয়ে সন্ত্রাসীদের দেখতে যান। এ সময় সন্ত্রাসীরা একটি বোমা বাড়ির মধ্যে ছুড়ে মারে। বোমার শব্দে পরিবারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সন্ত্রাসীরা হই হই স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়। ঝুপড়ি ঘরের কাছে এসে দেখি আব্বা মরার মতো হয়ে পড়ে আছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ৩টার দিকে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতিকালে তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে ছোটপুরিমারী গ্রাম সংলগ্ন নাগদাহ ক্যানালপাড়ার রজব মণ্ডলের ছেলে দুধব্যবসায়ী শফিক জানান, গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে একদল সন্ত্রাসী বাড়ি ঢুকে পানি খেতে চায়। বাড়ির লোকজনের সাড়া শব্দ না পেয়ে সন্ত্রাসীরা ঘরের বারান্দার গ্রিল ধরে ঝাঁকাতে থাকে এবং বোমা মারার হুমকি দিতে থাকে। এ সময় শফিক চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকারে গ্রামের লোকজন ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা হুমকি দিয়ে যায়, এবারের মতো বেঁচে গেলি। এরপর এসে তোকেসহ তোর পরিবারের লোকজনকে হত্যা করা হবে। তিনি আরো জানান, জানালা দিয়ে সন্ত্রাসীদের ৩ জনকে দেখেছেন তিনি। তাদের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা ছিলো। সন্ত্রাসীদের দেয়া হুমকিতে আতঙ্কিত পরিবারটি গতকাল তাদের বাড়ির মালামাল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, সম্ভবত ডাকাতরা নাগদাহ গ্রামে শফিকের বাড়িতে প্রথমে ঢোকে। সেখানে ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয়ে তারা ছোটপুটিমারী গ্রামের মুসারদ্দির বাড়িতে যায়। বাড়ির গেটের ভেতর একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হই হই করতে করতে মুন্সিগঞ্জের দিকে চলে যায় তারা। তবে ডাকাতির উদ্দেশ্য না-কি অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিলো তাদের এ বিষয়ে জানা যায়নি। বর্তমানে ছোটপুটিমারী ও তার আশপাশ গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে আরো জানায়, এলাকায় কিছু উশৃঙ্খল যুবক গ্যাংগ্রুপ গঠন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ছোটপুটিমারী গ্রামে রয়েছে মাদকব্যবসা। সেই কারণে এ গ্রামে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা প্রায়ই চোখে পড়ে। ফলে অপরিচিত সন্ত্রাসীদের অবাধে চলাফেরা করতে দেখা যায় এলাকায়।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজান জানান, ঘটনার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছোটপুটিমারী গ্রামে টহল পুলিশ ছিলো। পরে নতিডাঙ্গা মধুখালী ও পূর্বকমলাপুর ব্রিজ মোড়ে টহল দল যায়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বোমার আঘাতে আহত ব্যক্তির হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করি এবং ঘটনাস্থল থেকে বোমার আলামত উদ্ধার করি। এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে নাগদাহ গ্রামের একটি পরিবারের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা তিনি জানেন না বলে জানান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমার আঘাতে নিহত মুসারদ্দির বড় ছেলে মামলা করার জন্য আলমডাঙ্গা থানায় অবস্থান করছিলেন।

Leave a comment