প্রকৃত হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারে গড়িমসি মেনে নেবে না সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজ

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাংবাদিক সমাবেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, প্রেসক্লাবে হামলাকারীদের নিন্দার ভাষা সভ্য সমাজের সচেতনমহলও যেন হারিয়ে ফেলেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে চুয়াডাঙ্গায় অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে, প্রকৃত অপরাধীদের অবিলম্বে শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করতে হবে। অন্যথায় তীব্রতর আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কার্যালয়ে সমিতির সভাপতি অ্যাড. এসএম শরীফ উদ্দীন হাসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী। সাংবাদিক সমিতির সহসম্পাদক শেখ সেলিম উপস্থাপিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাবেক সদস্যসচিব নাসির উদ্দীন আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, সমিতির কার্যকরী সদস্য ফাইজার চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম ডালিম, জাহিদ জীবন প্রমুখ।

সাংবাদিক সমাবেশে দর্শনার সাংবাদিক আহসান হাবীব মামুনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মামলার আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে দর্শনা প্রেসক্লাবের গৃহীত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে পার পাওয়ার কারণেই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার পাশাপাশি চার সাংবাদিককে জীবননাশের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মিছিল করেছে। প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। দর্শনায় সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের ওপর নানাভাবেই হুমকিধামকি অব্যাহত রয়েছে। এসব কিসের আলামত? পুলিশ শক্ত হাতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে না পারলে প্রয়োজনে পুলিশের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীন বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, প্রেসক্লাবে হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিক সমিতির প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য প্রেসক্লাবের পক্ষে সাধুবাদ। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও চুয়াডাঙ্গা সাংবাদিক সমিতি অভিন্ন সত্ত্বা। যেহেতু চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের অস্তিত্বে আঘাত হানা হয়েছে, সেহেতু হামলাকারীদের উচিত শিক্ষা পেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে এখনও আইন আছে। চুয়াডাঙ্গা দেশেরই অংশ। চুয়াডাঙ্গায় আইন থাকবে না কেন? চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ সোচ্চার। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে হামলাকারীদের বিষদাঁত ভাঙতে কতোক্ষণ? তবে অধৈর্য হলে হবে না। ধৈর্য ধরেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে হবে।

গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে সশস্ত্র মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে পার্টিশন গ্লাস, অর্ধশত চেয়ার, ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। চার সাংবাদিক অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হলেও কেউ বেঁচেছেন চেয়ার দিয়ে ঠেকিয়ে, কারো প্রাণ রক্ষা হয়েছে পিঠের ল্যাপটপের ব্যাগে। মামলা রুজু করা হয়েছে। চার আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকৃত হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি নিয়ে গতরাতে সদর থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে মতবিনিময় করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান মুন্সি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে আরও কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন।

Leave a comment