বখতিয়ার হোসেন বকুল/খাইরুজ্জামান সেতু: করিমনচালক শাহাবুদ্দিনের লাশ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়, সেখানে তাকে খুন করা হয়নি। নিহত শাহাবুদ্দিনের পিতা এ মন্তব্য করে বলেছেন, বিলকিসের বাড়িতেই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। খুনের দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপাতেই বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে বাড়িরই আনুমানিক চারশ গজ দূরে ফেলা রাখা হয়।
শাহাবু্দ্দিনের পিতা বিল্লাল হোসেন খানেকটা জোর দিয়েই বলেছেন, শাহাবুদ্দিন খুনের বিষয়ে আর কেউ না জানুক, বিলকিসের মা চায়না খাতুন জানবেই। চায়না খাতুনের জন্যই বিলকিস একের পর এক স্বামী ছেড়েছে, নতুন করে স্বামী ধরেছে। চায়না খাতুনই শাহাবুদ্দিনকে নানা হুমকিধামকি দিয়ে বিলকিসকে তালাক দিতে বলেছিলো। বিলকিসের ৪র্থ স্বামী ছিলো শাহাবুদ্দিন। দ্বিতীয় স্বামী কার্পাসডাঙ্গা আরামডাঙ্গার হাসানের কাছে পুনরায় বিলকিসকে দিতে চেয়েছিলো বিলকিসের মা চায়না খাতুন। হাসানের নিকট ফেরত দেয়ার জন্যই শাহাবুদ্দিনকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। ঈদের মধ্যে হাসান বিলকিসের মায়ের হাতে কিছু টাকাও তুলে দেয় বলে গ্রামে গুঞ্জন রয়েছে। টাকা পেয়ে চায়না শাহাবুদ্দিনকে চাপ দিতে শুরু করলে শাহাবুদ্দিন ঢাকায় পাড়ি জমায়। সেখান থেকে ফিরেই গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুন হয় সে। ওই রাতে বিলকিসের বাড়িতেই ছিলো। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয় তার লাশ। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হলেও যেখানে লাশ পড়ে ছিলো সেখানে তেমন রক্ত ছিলো না। এ কারণেই অনেকের ধারণা, অন্য কোথাও তাকে খুন করে ওই স্থানে লাশ ফেলে রাখা হয়। মামলার বাদীর ধারণ, বিলকিসদের বাড়িতেই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। যদিও বিলকিস বলেছে, ঘটনার রাতের আগে বিকেলে বাজারে যাওয়ার কথা বলে শাহাবুদ্দিন বের হয়। আর ফেরেনি। পরদিন পাওয়া যায় লাশ।
শাহাবুদ্দিনের পিতা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি হিসেবে বিলকিস খাতুন (২৭), বিলকিসের মা চায়না খাতুন ও বিলকিসের পিতা বিল্লাল হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেয়া হয়। মামলার তদন্তভার পেয়েছেন দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুল মালেক। তিনি তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কলাবাড়ি দক্ষিণপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের প্রথম স্ত্রী ও সন্তান থাকতেও দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে একই গ্রামের উত্তরপাড়ার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে বিলকিসের বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রী সন্তান রেখে শাহাবুদ্দিন বিলকিসকে বিয়ে করে বিলকিসের পিতার বাড়িতেই থাকতো শাহাবুদ্দিন। রোজার মধ্যে শাহাবুদ্দিন তার প্রথম স্ত্রী সন্তানের খোঁজখবর নিতে শুরু করে। আর তখনই বিলকিসের মা বিলকিসকে তালাক দেয়ার জন্য শাহাবুদ্দিনকে চাপ দিতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে শাহাবুদ্দিন খুন হলো। বিলকিসের সাথে অস্ত্রধারীদের যোগসাজোশের বিষয়টি নতুন নয়। বিলকিসের দ্বিতীয় স্বামী হাসান নাকি অন্য কোনো নাগরের প্ররোচনায় হাসান খুন হয়েছে তা অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, বিলকিস খাতুনের দু ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই বিদেশে থাকে। ১৩/১৪ বছর আগে বিলকিসের প্রথম বিয়ে হয় একই উপজেলার গোপীনাথপুরের ইস্রাইলের সাথে। বিলকিসের প্রতিবেশী ইকরামুলই তার নিকটাত্মীয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে দেয়। সে সংসার টেকেনি। বিয়ের ৬/৭ মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটে। মধ্যস্তাকারী ইকরামুলের সাথেও ভালো সম্পর্ক থাকেনি বিলকিসের। ইকরামুলের বিরুদ্ধে বিলকিস কয়েকটি মামলাও করেছে। দ্বিতীয় বিয়ে হয় কার্পসডাঙ্গা আরামডাঙ্গার হাসানের সাথে। হাসানের বাড়ি পীরপুরকুল্লায় নাকি আরামডাঙ্গায় তা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও ওই সংসারে বিলকিসের এক পুত্র সন্তান আসে। সেই সন্তানের বয়স এখন আনুমানিক আট বছর। হাসানের সাথে বেশ কয়েক বছর সংসার করে বিলকিস। বিচ্ছেদ ঘটে। স্বামী পরিত্যক্তা অবস্থায় বিলকিস তার পিতার বাড়িতে থাকাকালে তার সাথে এলাকার চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজের পরিচয় হয়। ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে। তৃতীয় বিয়ে হয় বিষ্ণপুরের সাদ্দাম মানের এক ব্যক্তির সাথে। কিছুদিনের মাথায় বিচ্ছেদ হয়। তার পরই ধর্মভাই একই গ্রামের শাহাবুদ্দিনের সাথে মোটা অঙ্কের দেনমোহরে বিয়ে করে বিলকিস। সেই দেনমোহরের কারণেই শাহাবুদ্দিন নিজে তালাক দিতে আগ্রহী হয়নি। আর তাতেই তার জীবন হলো বিপন্ন। অথৈ সাগরে তার প্রথম স্ত্রী সন্তান।