নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মহাসড়কে সোমবার যাত্রীবাহী দুটি বাসের সংঘর্ষে ৩৪ জনের প্রাণ ঝরেছে। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাসের সাথে সংঘর্ষ হয় রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জগামী আরেকটি বাসের। গুরুতর আহতের সংখ্যাও মৃত্যুসংখ্যার কাছাকাছি। এটাই প্রথম নয়, এরকম লাশের স্তূপ মাঝে মাঝেই দেখতে হচ্ছে দেশবাসীকে। প্রতিকার মিলছে না কেন?
যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সামাজিক প্রাণচাঞ্চল্যেও নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। আমাদের সড়কপথ দিনদিন যদি অধিকতর ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়, তবে বুঝতে হবে আমরা ‘পরিণত’ পরিকল্পনায় এগুচ্ছি না। ফি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৩ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হচ্ছে। হাসপাতালে নেয়ার পথে ও হাসপাতাল হতে অব্যাহতি পাওয়ার পর নিহতের সংখ্যা যোগ করলে অঙ্কটি দাঁড়ায় ৫ সহস্রাধিকে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট সারা দেশের মোট তিন হাজার ৫৮০ কিলোমিটার মহাসড়কে ২০৯টি স্থানকে অতি-দুর্ঘটনাপ্রবণ ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ শতাংশ এবং মোট মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটে এ স্থানগুলোতে। এ ‘ব্ল্যাক স্পটগুলো সরু বাঁক ও নির্মাণ প্রকৌশলগত নানাবিধ ত্রুটি। অনেক স্থানে রয়েছে অবৈধ হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ড ও অন্যান্য স্থাপনা। এ সকল স্থানে লোকসমাগমের প্রাচুর্য ঘটলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা সামান্যই রয়েছে। এর সাথে রয়েছে ছোট বড় সড়কে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানের বেপরোয়া চলাচল। চালকদের অদক্ষতা, সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব এবং ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের বিষয়টি তো রয়েছেই। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের ছোট বড় সড়কগুলো মৃত্যুপুরিতে রূপ নিয়েছে। মৃত্যুপুরির দানবের নাম শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযান। গতকালও মুন্সিগঞ্জ রোয়াকুলির অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্য অবৈধযানের বলি হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সবই যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। যখন বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা দুর্ঘটনার শিকার হন তখন কিছুটা নড়াচড়া করতে দেখা যায়। বোঝা যায় দেশে দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে আইনও রয়েছে। এগুলোও যে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য বহুলাংশে দায়ী তা দায়িত্বীশলেরা অস্বীকার করবেন কীভাবে?
সড়ক দুর্ঘটনা মহামারির লাগাম কেন টেনে ধরতে পারছি না আমরা? নিয়মিত রাস্তা-ঘাট সংস্কার, সম্প্রসারণ, ডিভাইডার তৈরি, চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সবই হচ্ছে, এরপরও দুর্ঘটনা বাড়ছে কেন? নিশ্চয় শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। উন্নত বিশ্ব যখন দুর্ঘটনা হ্রাসে সফল হয়েছে, তখন দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানো যায় না। দুর্ঘটনা রোধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ চাই। চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা।