আখ মাড়াইয়ের যন্ত্রে গুঁড়িয়ে গেছে ভ্রাম্যমাণ রস বিক্রেতার হাত
স্টাফ রিপোর্টার: আখ চিপে রস বের করা যন্ত্রে একটি হাত কেড়ে নিয়েছে মজিবর আলীর (৫২)। ভ্যান ছেড়ে পালিত গরু-ছাগল বেঁচে যে যন্ত্র কিনে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি, সেই যন্ত্রেই কেড়ে নিলো একটি হাত। দরিদ্র পরিবারটি পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার অথই সাগরে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে আখ চেপে রস বিক্রির সময় শ্যালোইঞ্জিন চালিত যন্ত্রের মধ্যে বাম হাত ঢুকে যায়। হাতের কনুই গুঁড়িয়ে যায়। দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে সাথেই থাকা কিশোর ছেলে ইনামুল। মজিবর রহমানকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ কবির জন বলেছেন, হাতের কনুই যেভাবে গুঁড়িয়ে গেছে তাতে হাতটি কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হতে পারে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাইদঘাট গ্রামের আক্তার আলীর ছেলে মজিবর রহমান দীর্ঘদিন ধরে দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ায় স্ত্রী ও শিশু তিন ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। ভ্যান চালাতেন তিনি। শ্যালোইঞ্জিনচালিত আলমসাধু করিমনের দাপটে ভ্যানের ভাড়া কমে যাওয়ার কারণে তিনি পেশা বদলানোর পরিকল্পনা করেন। তিল তিল করে জমানো কিছু টাকা দিয়ে কেনেন ছাগল ও গরু। গরু ও ছাগল এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েই কিনেছিলেনে আখমাড়াইয়ের ভ্রাম্যমাণ যন্ত্র। আখের রস করে বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নের খুব কাছাকাছি পৌছেও শেষ পর্যন্ত তিনি দুমড়ে গেলেন। প্রতিদিনই তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা আয় করছিলেন তিনি। সংসারে সচ্ছলতা ফিরতে শুরু করলেও হাঠাতই যেন আকাশ ভেঙে পড়লো মাথায়। অসতর্কতায় শ্যালোইঞ্জিনচালিত যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে গুঁড়িয়ে গেছে হাত। হাত গুঁড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার স্বপ্নও যেন চুরমার হয়ে গেছে। তিনিই তার সংসারের উপার্জনক্ষমপুরুষ। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইনামুল (১৫) পিতাকেই সহযোগিতা করে আসছিলো। মেজ ছেলে ইকরামুল (১১) তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে ইনজামুলের বয়স সবে ৬।
কীভাবে চলবে চিকিৎসা খরচ? সংসারই বা চলবে কীভাবে? এসব প্রশ্নের জবাব জানেন না, মজিবর আলীর স্ত্রীসহ তিন সন্তান।