দু পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০ : মহাসচিব অবরুদ্ধ

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর দলটির নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর দলটির নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থামেনি। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ও অফিসের সামনে পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিত নেতা এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পদবঞ্চিত পক্ষের হামলায় নবগঠিত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ভাংচুর হয়েছে কেন্দ্রীয় অফিসের নিচতলা। বিস্ফোরিত হয়েছে ককটেল। দু পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে নয়া পল্টন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীদের অবরোধে দিনভর দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকেন বিএনপির মহাসচিব, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, যুবদলের সভাপতি, বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য সচিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সংগঠনটির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিসহ বিএনপির প্রায় ১০ জন নেতা। বিক্ষুব্ধদের সাথে মহাসচিবের বৈঠক ও তাদের দাবি পুনর্বিবেচনা করা হবে- এমন আশ্বাস পাওয়ার পর সন্ধ্যায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়।

গত ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পর দিন থেকে এ বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৫ অক্টোবর পদবঞ্চিত এবং পছন্দমতো পদ না পাওয়া নেতা ও তাদের সমর্থকরা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে এবং নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কমিটি পুনর্গঠন এবং বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারও তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শনিবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় অফিস তালাবদ্ধ করে বিদ্রোহীরা। ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে রাতেই ওই তালা খোলা হয়।

গতকাল সকাল ৯টার দিকে নয়াপল্টনে ছাত্রদলের অফিসে আসেন নবগঠিত কমিটির সভাপতি রাজিব ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম এবং তাদের অনুসারীরা। এ সময় বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং সহসম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও অফিসে প্রবেশ করেন। টুকু এবং রাজিব-আকরামের সমর্থক নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের ভেতরে ও বাইরে শোডাউন করেন। দুপুর সোয়া একটার দিকে নতুন কমিটি গঠনের জন্য খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করে নবগঠিত কমিটি।

দুপুর ১২টার দিকে বিদ্রোহীরা নয়াপল্টনের অবস্থান নিতে শুরু করেন। পাল্টাপাল্টি স্লোগান-মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল দু পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। দু পক্ষকেই শান্ত থাকতে তারা আহবান জানান। ঠিক ওই সময়ই বিএনপি অফিসের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপরই দু পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নবগঠিত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, ছাত্রদলের ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শরীফুদ্দিন জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ, রয়েল, মাসুদসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে তিন জন বিএনপি অফিসের নিচতলায় ছাত্রদলের মহানগরের অফিসে আশ্রয় নেন। পরে পদবঞ্চিত নেতারাই এ্যাম্বুলেন্স ডেকে এনে তাদেরকে হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য পাঠান। সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করে।

পদবঞ্চিত নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, এ বিক্ষোভ শুধু নতুন কমিটির বিরুদ্ধে নয়। বিএনপি ধ্বংস করতে দুর্নীতিপরায়ণ কয়েকজন নেতা এ পকেট কমিটি ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। এটি পরিবর্তন করতেই হবে।

বিএনপি অফিসে ভাচুরজিয়ার ম্যুরালে আঘাত: ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ছাত্রদলের পদপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় অফিসের ভেতরে এবং পদবঞ্চিতরা বাইরে অবস্থান নেন। দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ঢিল ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পদবঞ্চিতরা দলীয় কার্যালয়ের নিচতলার কলাপসিবল গেট ভেঙে নিচতলায় অবস্থান নেন। আর পদপ্রাপ্তরা একই ভবনের চারতলায় অবস্থিত ছাত্রদলের অফিস ও সংলগ্ন অন্যান্য কক্ষে অবস্থান নেন। পদবঞ্চিতদের হামলায় দলীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় বিএনপি মহাসচিবের কক্ষের পাশে ব্রিফিং রুমেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। ভবনের নিচতলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরালঘেরা কাঁচও ভাঙচুর করা হয়। তবে এজন্য দু পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করেছে। বিদ্রোহী অংশের এক নেতা জানান, তারা আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর দলীয় কার্যালয়ে অবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।