পরিবারের অভিযোগ ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে যশোর ডিবি পুলিশ হত্যা করেছে
ঝিনাইদহ অফিস/কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে উপজেলার বারোবাজার ফুলবাড়ি নামক স্থানে দু ব্যক্তি আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছেন। গত সোমবার রাতে তাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ফুলবাড়ি নামক স্থানে ব্রাশফায়ারে খুন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন যশোর ডিবির দিকে। পুলিশ অবশ্য নিহত দুজনকে সন্ত্রাসী কানেকশনের কারণে প্রতিপক্ষের গুলতে খুন হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। বলেছে, ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এ খুনের ঘটনা ঘটনানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- যশোর সদর উপজেলার কেসমত রাজাপুর গ্রামের ভোদো দাই ওরফে বুলু সরদারের ছেলে হাদিউজ্জামান হাদি (৩৫) ও বড় রাজাপুর গ্রামের ঠুটো রফিক ওরফে রফিউদ্দীনের সরদারের ছেলে সোহাগ আলী সরদার (২৮)। তারা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো বলে পুলিশ জানায়।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সংলগ্ন ফুলবাড়ি নামক স্থানে ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের পঞ্চাশ গজ পাশে দু ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি বেগুনক্ষেত থেকে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। তাদের একজনের বুকে ও মাথায় ২টি এবং অপরজনের বুকে ১টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। গত সোমবার রাতের কোনো এক সময়ে ব্রাশফায়ারে তাদেরকে হত্যা করা হয়। নিহতদের স্বজনরা সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে নিহত সোহাগের পিতা রফিউদ্দীন জানান, গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাদের নিজ বাড়ি থেকে হাদিউজ্জামান, সোহাগ ও তার দু ভাতিজা যশোর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আটক করে গাড়িতে করে নিয়ে আসে। খাজুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই মাসুদ ডিবি পুলিশের সাথে গিয়ে তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। রাস্তার মধ্যে ডিবি পুলিশ তার দু ভাতিজাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে হাদিউজ্জামান ও সোহাগকে নিয়ে যায়। ভোরবেলা আমরা খবর পায় তাদের ক্রসফায়ার দিয়েছে পুলিশ। নিহতদের একজন আমার ছেলে অন্যজন ফুফাতো ভাই। তার ছেলে সোহাগ মাঠে কৃষিকাজ করতো, সে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো না বলে রফিউদ্দীন দাবি করেন। গত ১৮ ও ২০ সেপ্টেম্বর সোহাগের নামে ডাকাতি প্রস্তুতির দুটি মামলা দেয় পুলিশ। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে রাতে পুলিশ তাদের জানায়। সোহাগের পিতা জানান, ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল তার ভাতিজা বাসের আলী দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়। সে সময় তার ছেলে সোহাগ মারাত্মক আহত হয়। ওই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে এলাকার ত্রাস হাসান আলীকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নামে একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান খাজুরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ। চার্জশিট দেয়ার জন্য মামলার বাদী রফিউদ্দীনের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে এসআই মাসুদ। এরই মাঝে আসামিদের সাথে অর্থবাণিজ্য করে তাদের পক্ষ নেয় মাসুদ। একপর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসআই মাসুদ আসামিদের পক্ষে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেন। পরে মামলার বাদী আদালতে নারাজি পিটিশন দিলে আদালত সিআইডির ওপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার দেন। এসআই মাসুদ এতে রফিউদ্দীনের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
নিহত হাদিউজ্জামান হাদির ভাই তরিকুল ইসলাম জানান, ডিবি পুলিশ রাতে হঠাৎ রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। পরে আমরা কোতয়ালী থানা ও পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করি। রাতে পুলিশ আমাদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। সকালে আমরা জানতে পারি পুলিশ দুজনকে হত্যা করে ফুলবাড়ি লাশ ফেলে রেখে গেছে। তার ভাই কৃষিকাজ ও ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ৫ লাখ টাকা নিয়ে এসআই মাসুদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তার ভাইকে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান জানান, আমি সাক্ষী দিতে ঢাকায় এসেছি। আপনি হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করেন। দায়িত্বে থাকা অন্য কর্তকর্তারা বলেন, তাদের কোনো টিম কাউকে আটক করেনি। এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। যশোর কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি এনামুল হক পিপিএম জানান, নিহত দুজন পূর্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি করতো। বর্তমানে নিহত হাদি ও সোহাগ যশোর সদরের উত্তরাঞ্চলের ত্রাস আশকার বাহিনীর ক্যাডার হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলো। তাদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ ছিলো অতিষ্ঠ। নিহত হাদি যশোরের ইছালী ইউনিয়ন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা খলিল হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ ঝিনাইদহ-যশোর, যশোর-মাগুরা সড়কে ডাকাতি মামলা রয়েছে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা হত্যার শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, নিহতদের উভয়ের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার রাজাপুর এলাকায়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যশোর কোতয়ালী থানার উদ্বৃতি দিয়ে এসপি জানান, নিহত হাদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। সে যশোর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আর সোহাগের নামে ৪টি মামলা রয়েছে।