সড়ক মৃত্যুপুরি : বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল

 

কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না, বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যতো দিন যাচ্ছে সড়ক মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল ততোই লম্বা হচ্ছে। প্রতিকারহীনতার অচলায়তনে মাথা কুটে মরছে স্বজনহারা মানুষ। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে বুকফাটা আর্তনাদ। ন্যূনতম সান্ত্বনাটুকুও জুটছে না স্বজনহারা মানুষের।

 

ঈদের পরদিন অগ্রণী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নূরুল আবসার তার দু কন্যাকে সাথে নিয়ে সস্ত্রীক বেড়াতে যাচ্ছিলেন সিলেট। যাত্রাপথেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে চারজনের পরিবারটির তিনজন সদস্যকে। বেঁচে গেছে তাদের শিশুকন্যা। তাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবো আমরা? ছোট-বড় সড়কে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত রোববারে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ব্যবধানে সারাদেশে ঝরে গেছে প্রায় ২৪টি তরতাজা প্রাণ। এ সংখ্যা সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও সংবাদ মাধ্যমের বাইরেও যে আরো অনেক রয়েছে তাও অনুমান করা কষ্টকর নয়। আহতের সংখ্যা? শতাধিক।

 

দুর্ঘটনা উন্নত দেশেও হয়। তবে আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যে হারে হয়, অতোটা বোধকরি অন্য কোথাও হয় না। সে কারণেই আমাদের দেশের ছোট বড় সড়কগুলোকে মুত্যুপুরি বললে কোনোভাবেই ভুল বলা হয় না। সড়কে বের হয়ে সুহালে বাড়ি ফেরার ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই। থাকবে কীভাবে? সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে কঠোরভাবে নিয়মনীতি ও আইন মেনে চলতে হয়। যতো প্রভাবশালীই হোক না কেন- নিয়মনীতি তথা আইনের সীমা লঙ্ঘনকারীদের পার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। যে দেশে আইন চলে আপন গতিতে, সেসব দেশে দুর্ঘটনা ততোই কম। অবাক হলেও সত্য যে, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশেই মোটরসাইকেলের বেপরোয়াগতিতে চালানো দেখে মনে হয়, দেশে আইন লঙ্ঘন করাটাই যেন ওদের গৌরবের। আইন যারা প্রণয়ন করেন এবং আইন প্রয়োগ করা যাদের দায়িত্ব তাদের দৃষ্টি কি এদিকে পড়ছে? পড়লে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু মিছিল অতো লম্বা হচ্ছে কেন? আর অবৈধযান? তা নিয়ে তো এখন পাল্টাপাল্টি যুক্তি দিয়ে প্রশাসনিক কোনো কোনো কর্তাবাবুই বৈধতা দেয়ার গুরুত্বারোপ করেন।

 

রাস্তায় চলাচলকারী হাজার হাজার গাড়ির যে ফিটনেস নেই, অধিকাংশ চালকেরই যে বৈধ কাগজপত্র নেই, নেই প্রয়োজনীয় দক্ষতা- তা সংশ্লিষ্ট কর্তাবাবুদেরও বোধকরি অজনা নয়। আইনের প্রতি অবজ্ঞা কখনই কল্যাণকর হয় না। বিশৃঙ্খলা যতো দিন থাকবে, সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিলও ততো বাড়তে থাকবে।

Leave a comment