যাব কিন্তু ওভাবে যাব না
-ময়নুল হাসান
ভেবোনা কাউকে কিছু না ব’লেই
ফিরে যাব শূন্য হাতে
শেষ ঠিকানায় যাবার আগে
ঠিকই রেখে যাব দীর্ঘস্থায়ী কালো দাগ
মৌচাক ওই বুকের নিভৃতে।
সবুজ সম্ভ্রম ঘেরা ঝর্ণাপ্রবাহে তোমার
একদিন ঠিকই ডুবিয়ে শরীর
তুলে নেবো গোপন ঐশ্বর্য, ঝিনুকের সুখ।
ভালোবাসার দাফন সেরে আপন খেয়ালে
যে যায় যাক সীমান্ত পেরিয়ে
আমি যাব না।
কেন যাব ওভাবে চোরের মত ভোরের ট্রেনে
পলাতক রাজন্য হ’য়ে?
সার্বভৌম ওর শরীর সাম্রাজ্যে
আরও কিছুকাল থাকব আমি
বিনা যুদ্ধে কোন শালাকেই দেব না ছেড়ে
একচুল ভিটেমাটি
ভালোবাসার অরণ্য আকাশ।
সেই ছেলেটি কই
-ইদ্রিস মণ্ডল
একটি ছেলে সবার প্রিয়
সবার চেনা মুখ
হারিয়ে গেছে সেই ছেলেটি
শুন্য সবার বুক।
লেখালেখি করতো সে
বাসতো ভালো বই
লেখক কবি খুঁজছে সবাই
সেই ছেলেটি কই।
যার হাসিতে সবার মনে
তুলতো খুশির ঝড়
টানতো কাছে আপন করে
থাকতো না কেউ পর।
হঠাৎ করে সেই ছেলেটি
এমনি বিদায় নিলো
বন্ধু, সুজন লেখক কবির
দুঃখ সবার দিলো।
জীবননগর বাড়ি ছেলের
সবাই চেনে তার
সবার প্রিয় কাছের মানুষ
নাম কাজী হায়দার।
এই পতাকা
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
এই পতাকা শেখ মুজিবের
বঙ্গুবন্ধুর জন্য,
বিশ্ব জুড়ে গর্ব মোদের
সব বাঙালি ধন্য।
এই পতাকা মুক্তিসেনার
একাত্তরের যুদ্ধ,
হার মানে সব পাকপশুরা
নাতিপুতি শুদ্ধ।
এই পতাকা বীরের জাতি
নয়তো মাথা নত,
পদ্মা নদীর দূরন্ত ঢেউ
যেন বাঘের মত।
এই পতাকা দু’চোখ জুড়ে
আমার মায়ের ছবি,
ভালোবেসে গান কবিতা
লিখি ছড়া সবই।
এই পতাকা ঠিকানা মোর
গর্ব যে তাই করি,
মনের জোরে এই পতাকা
শক্ত হাতে ধরি।
কঠিন পথে
জোয়াদ আলী
নাইরে টাকা হলাম বোকা বসে এখন ভাবী,
সবার প্রতি ছালাম আমার একটু খানি দাবি।
বাংলার মানুষ আমি হলাম হতভাগা,
দয়া করে এই অধমের অন্তরে দিও জায়গা।
জায়গা দিও দোয়া করো কবি হওয়ার জন্য,
এই কামনা আমার মনে হয় যেন পূণ্য।
শূন্য হাতে সেই পথে কোথায় টাকা পাবো,
মনে আমার সাধ জেগেছে ভারত দেশে যাবো।
সেই দেশেতে কবিদের হবে সম্মেলন,
কেমনে যায় সেথায় এখন টাকার প্রয়োজন।
টাকা ছাড়া পথে চলা হয় যে বড় কঠিন,
দয়া করে কবির হাতে কিছু টাকা দিন।
কত টাকা খরচ হয় যে অসত এই পথে,
কিছু টাকা দিন সবাই এই কবির হাতে।
এই পর্যন্ত মনে কথা রেখেদিলাম ইতি,
আমার দেশের মানুষ হও এই কবির সাথি।
জন্মের স্বাদ
-কহন কুদ্দুস
….অনেক পথ হেটে
অবশেষে বঙ্গোপসাগরের তীরে;
সন্ধ্যার আলো-আঁধারীতে বড় ক্লান্ত আমি
চিরল পাতায় দোল খেয়ে যায়
মৃদুমন্দ বাতাস
চোখ মেলে তাকায় রূপালী চাঁদ
আর ধীর পায়ে পথ হাঁটে বেদনার আঁধার
ও সন্ধ্যা ও নীল আকাশ ও আমার…
নারীর ভেজা চুলের গন্ধ আমাকে বিমোহিত করে,
স্বার্থক জনম আমার, জন্ম এই বাংলায়।
মানবতা কেঁদে মরে
-মো. আনছার আলী
ফেলানি তুই ফেলনা
বিএসএফের খেল্না।
তা না হলে কাটা তারে
তোর লাশ দোল খায়?
সীমান্তে ঘরে ঘরে
মানবতা কেঁদে মরে।
সভ্যতা বারবার
এভাবে ঘোল খায়?
আমাদের প্রতিবেশী
জোর তার খুব বেশি।
তাই বলে যা খুশি
তাই তারা করবে?
আমাদেরও একদিন
থাকবে না দুর্দিন
সেই দিন জনগণ
টুটি চেপে ধরবে।
সঞ্জীব কুমার রায়
হয়ে আছি আমি যেন আজন্ম প্রবাসী
হৃদয়ের ভাষাটাও বোঝে না দোভাষী
কাঁকরের পথে ঘোরে বৈরাগী মনটা
এতটুকু বোঝে না সে খুঁজছে কোনটা
এভাবেই চলছে, চলছি
কখনো ছাইচাপা, কখনো শিষ তুলে জ্বলছি।
নোনাজলে শ্বাস তোলে চোপসানো ফুলকা
মাঝ রাতে খসে পড়ে আশা ভরা উল্্কা
হামাগুড়ি দিয়ে চড়ি স্বপনের সিঁড়িতে
পা পা করে তবু বসি আগুনের পিঁড়িতে
এভাবেই চলছে, চলছি
কখনো ছাইচাপা, কখনো শিষ তুলে জ্বলছি।
উড়ে যেতে ডানা মেলি অবারিত বায়ুতে
অযাচিত চিড় ধরে অভিলাষী আয়ুতে
টন টন সুখ বেচি শুধু এক ভরিতে
কেউ তবু ওঠেনাতো জীবনের তরীতে
এভাবেই চলছে, চলছি
কখনো ছাইচাপা, কখনো শিষ তুলে জ্বলছি।
শরৎ
-মো. আনছার আলী
সাদা মেঘের ভেলা
রৌদ্র-ছাঁয়ার খেলা
শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে
মুক্তো দানার মেলা।
ভরা নদীর বাঁক
বুনো পাখির ঝাাঁক
বটের ডালে কিচির মিচির
নানা রকম ডাক।
সাদা বকের সারি
দেয় আকাশে পাড়ি
নায়ে বসে মাঝিরা গায়
মধুর জারি-সারি।
শাপলা ফোটা বিল
আকাশে গাং চিল
মাছ শিকারী মাছ রাঙাকে
কিশোর ছোঁড়ে ঢিল।
সাদা কাশের বন
উদাস করে মন
জোছনা মাখা রাতে জাগে
প্রাণে শিহরণ।
শিউলি ঝরা ভোরে
সবার অগোচরে
ফেলে আসা দিনের কথা
শুধুই মনে পড়ে।