স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক দুর্ঘটনারোধে মানববন্ধন ও বিবেক জাগ্রত সভায় বক্তারা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, আর কতোজন পঙ্গু হলে, কতোজনের মৃত্যু হলে সড়ক নিরাপদ হবে? একের পর এক দুর্ঘটনায় তরতাজ প্রাণ ঝরছে। পঙ্গুত্বের অভিশাপ নেমে আসছে অসংখ্য পরিবারে। অথচ দুর্ঘটনারোধে যথাযথভাবে আইনপ্রয়োগ করা হচ্ছে না। অভিভাবকদের মধ্যেও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ মিলছে না।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার মানবতা সংস্থার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিবেক জাগ্রত সভার আয়োজন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা কোর্ট রোডে মানববন্ধন ও বিবেকজাগ্রত সভা শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপি গ্রহণকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধন ও বিবেক জাগ্রত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. এমএম এম শাজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সাঈদ মাহমুদ শামীম রেজা ডালিম, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. মোসলেম উদ্দীন, মানবতা সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. নূরুল ইসলাম, মনবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা চুয়াডাঙ্গা জেলা সেক্রেটারি অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক, মানবতার অ্যাওয়ারনেস বিল্ডআপ প্রজেক্টের পরিচালক অ্যাড. মজিবুল হক চৌধূরী মিণ্টু, হিউম্যান রাইটস মনিটরিং সেলের সাবেক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুর রউফ, মানবতা সংস্থার নির্বাহী পরিষদের সহসভাপতি অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার শিল্পী, তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড. নওশের অলী, গণসংযোগ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দীন হাবলু, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, নারী নেত্রী মনিরা আফরোজ, রউফুন নাহার রিনা, এপিপি অ্যাড. তানিয়া লাঞ্চ, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অ্যাড. রুমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানমালা সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন মানবতা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার। তার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরা পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনায় একের পর এক নারী পুরুষ শিশু কিশোর পঙ্গু হচ্ছে। প্রাণ হারাচ্ছে। দুর্ঘটনায় উপার্যনক্ষম পুরুষকে হারিয়ে বহু পরিবারে নেমে আসছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। ফলে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবতা সংস্থা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বিষয়গুলো চিহ্নিত করে ১৪ দফা দাবিও উপস্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জন্য পরক্ষ ও প্রত্যক্ষ দায়ী মাদক। বিকেল হলেও দর্শনা অভিমুখে ছোটা আর সন্ধ্যার পর ফেরা বেপরোয়াগতির মোটরসাইকেলগুলোর অধিকাংশেরই রেজিস্ট্রেশন নেই। চালকদেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। একেতো আনাড়ি তার ওপর মাদকের কুপ্রভা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেচে। ভ্যান রিকশা অটোর নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত স্ট্যান্ড দিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে হবে। দুর্ঘটনারোধে সামাজিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং লিফলেট বিতরণ ও সভা সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের হাতে মোটরযান চালনা রোধে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বেপরোয়া গতিতে মোটরযান চলাচল রোধে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট ব্যবহারে বাধ্যবধকতা জরি করে আইন প্রয়োগ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের আইনের আওতায় নিতে হবে। অবৈধ মোটরযান যেমন নসিমন, করিমন আলমসাধু ও আলগমান চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক দ্রুত অপসারণ করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যানবাহনের জট ও দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে বাইপাস সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে পথচারি চলাচলের জন্য ফুটপাথের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলার প্রধান সড়কের ব্যস্ততম মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হবে।