মসলার ঝাঁজ মূল্যবৃদ্ধি এবং উত্পাদন

কোরবানির ঈদের প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে। কোরবানির মাংসের স্বাদের জন্য মসলা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। ভিড় জমেছে মসলার বাজারে। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে গেছে বলে অভিমত ভোক্তা ক্রেতা সাধারণের। অভিযোগের কিছুটা হলেও সত্যতা মেলে পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারের দামের হের-ফেরের হিসেব কষলে।

 

মসলা যেহেতু আমদানি নির্ভর সেহেতু চাহিদা বনাম সরবরাহের ফাঁরাকেই মূল্য ওঠা-নামা করে। কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। আমদানিকারকেরা আমদানি করেন। এবার পড়শি দেশ ভারত থেকে যথেষ্ট পরিমাণ মসলার আমদানি হয়েছে। কিন্তু জিরা, গোলমরিচ, জয়ফল ও দারুচিনির বাজারে তার প্রভাব পরীলক্ষিত হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলা উৎপাদনকারী দেশগুলোতে এবার উৎপাদন কমে গেছে, তাই আমদানি কম। অথচ কোনো দোকানেই মসলার ঘাটতি নেই। অনেকেরই অভিমত, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের মূল্যের ব্যবধান কমানো গেলে ক্রেতারা তথা ভোক্তা সাধারণের কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলতো। বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তারা এ তফাত হ্রাস করতে পারছেন কি? যেকোনো জিনিসের চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে। ঈদ ও পূজা-পার্বনে মসলাপাতির চাহিদা বাড়ে। রোজার মাসে পেঁয়াজের বাজারে ঝাঁজটা একটু বেশিই অনুভূত হয়। আর কোরবানির দিনগুলোতে আদা, পেঁয়াজ, রসুন এবং মসলার দাম বাড়তে দেখা যায় প্রায় প্রতিবছর। এবারও যেহেতু ব্যতিক্রম নয়, সেহেতু কেন (?) প্রশ্নটি সামনে উঠে আসে। অনেকেই আছেন যারা দাম বাড়তে পারে ভেবে আগেভাগেই কিনে রাখেন। কেনার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। এরও প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ে।

 

বাঙালির রসনা যে একটু বেশিই মসলা আসক্ত, তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। মসলার ঝাল ও ঝাঁজ ছাড়া যেন বাঙালির মন ভরে না। শহুরে বাঙালির অনেকে একালে কম ঝালে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও ঝাঁজ ও ঝালবিহীন গোস্তের ক্ষেত্রে! চলেই না। মসলা আমাদের দেশে উত্পন্ন হয় না বললেই চলে। জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনির প্রায় সবটাই আমদানি করতে হয়। দেশে অবশ্য অল্প-বিস্তর তেজপাতা হয়। দারুচিনিও বাংলাদেশে উত্পাদন সম্ভব। পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, মরিচ, ধনিয়া, মৌরি ইত্যাদি মসলা আমাদের নিজস্ব। একটা সময় ছিলো যখন কেউ কল্পনাও করতে পারতো না যে, এসব মসলা আমদানি করতে হবে। চৈত্র-বোশেখে এ মসলাপাতিই গ্রামীণ জীবনে অর্থযোগ করতো। খরিপ মরসুমে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে নানাজাতের মসলার আবাদ হতো। আদা ও হলুদের জন্য তেমন কোনো প্রস্তুতিরও প্রয়োজন পড়তো না। বাড়ির আঙিনাতেও অনেকে এ দুটি মসলার চাষ করতেন। সেদিন এখন আর নেই। একালে বাজারে যতো মসলা পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই বিদেশি তথা আমদানি করা। দেশিজাতের আদা কিংবা রসুন অথবা পেঁয়াজ খুঁজে পাওয়া ভার। দেশিটার দামও বেশি। এখানে আছে আবার ফাঁকিবাজি। দেশি বলেই জিনিস ধরিয়ে দেয়া হবে আদতে তা কোন দেশি তা বলা মুশকিল। মসলা আমদানিখাতে প্রতিবছর আমাদের ব্যয় করতে হয় বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। এমন কি দেশে উত্পাদন সম্ভব- এরকম মসলা আমদানির যে পরিমাণ তাও মোটে কম নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার টন। অন্যদিকে গত দু মাসে রসুন আমদানি করা হয়েছে ১৩ হাজার টন।

 

আমাদের আবাদযোগ্য জমি দিনকে দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চাষিরা যে আবাদ লাভজনক সে আবাদের দিকেই ঝোকেন। দেশে উৎপাদনযোগ্য মসলার আবাদে আগ্রহ হারনোরও নানা কারণ রয়েছে। এসব সমস্যা-সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে কিভাবে মসলা জাতীয় শস্যের আবাদ বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। একই সাথে দরকার মসলার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে তা জোগানের নানামুখি পদক্ষেপ।

Leave a comment