স্টাফ রিপোর্টার: জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশব্যাপি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণহত্যা, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতাল হরতালের আওতার বাইরে থাকবে। কুষ্টিয়ায় জামায়াতে ইসলামী হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলেও চুয়াডাঙ্গায় তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
বিবৃতিতে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। এ রায় ন্যায়বিচার পরিপন্থি। বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি, সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তাছাড়া স্কাইপ কেলেংকারির পরও ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থি। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন, যে সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তাকে শুধু দোষী সাব্যস্তই করা হয়নি, মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায়। আবদুল কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এর বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ পিটিশন দায়ের করব। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা ও দু’একজন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী বলে বেড়াচ্ছেন, রিভিউ পিটিশনের কোনো সুযোগ নেই। আবদুল কাদের মোল্লাকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝুলানোর কথাও তারা বলছেন। তাদের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আবদুল কাদের মোল্লাকে তড়িঘড়ি করে হত্যার ষড়যন্ত্রই ফুটে উঠেছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উৎখাতের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। ইসলামবিরোধী নারী নীতিমালা প্রণয়ন, ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে মাদ্রাসা শিক্ষা সংকোচনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূলত সরকার ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্র করছে। সরকার দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামী দলগুলোর ওপর চরম জুলুম-নির্যাতন পরিচালনা করছে। সরকার গণগ্রেফতার, গণহত্যা ও অত্যাচার-নিপীড়নের মাধ্যমে ইসলামপন্থীদের সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কয়েকদিন ধরে ইসলামী আদর্শবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কূটকৌশল অবলম্বন করেছে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকা। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশালী শাসন চাপিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো চক্রান্ত দেশের জনগণ বাস্তবায়ন হতে দেবে না। ৪৮ ঘণ্টার হরতাল সফল করতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জামায়াতের ডাকা হরতাল সফল করতে মেহেরপুরে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে শহরের কাথুলী সড়কে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে জনতা ক্লিনিক মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে টেম্পু স্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। রায় প্রত্যাখানসহ সরকারের বিরুদ্ধে জুলুল নির্যাতনের অভিযোগ করেন বক্তারা। আটক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে সর্বাত্মক হরতাল পালনের আহবান জানান শিবির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাতিলসহ জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে হরতালের সমর্থনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কুষ্টিয়া শহর শিবিরের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের রক্সি মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বড় বাজার পুরাতন রেলস্টেশন এর কাছে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় । কুষ্টিয়া শহর শিবিরের সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মুস্তাফিজুর রহমান পলাশের ব্যবস্থাপনায় মিছিলে কুষ্টিয়া শহর শিবিরের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীরা অংশ গ্রহন করে।