বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীর বহুদেশ এ খাতে পিছিয়ে থাকলেও আমাদের সাফল্য এক্ষেত্রে ঈর্ষণীয়। শিশু মৃত্যুহার নিয়ে জাতিসংঘ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, সারাবিশ্বে প্রতি হাজার শিশুর ৪৬ জন মারা যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা ৪১ জন। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও প্রতি হাজারে ৫৩ শিশু মারা যায়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) চতুর্থ লক্ষ্য শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনায় জাতিসংঘ বাংলাদেশসহ আটটি দেশের প্রশংসা করেছে। তবে নবজাতকের চিকিত্সায় পর্যাপ্ত দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুহার আরো কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি ইস্টিমেশন’ তাদের ‘লেভেলস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন চাইল্ড মরটালিটি-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে দেশগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছে। সারাবিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে যতো শিশু মারা যায় তার এক-তৃতীয়াংশ ভারত এবং নাইজেরিয়ায় মারা যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য যেসব দেশ ভালো করেছে সেগুলো হলো- লাইবেরিয়া, তানজানিয়া, ইথিওপিয়া, মালাউই, তিমুর এবং ইরিত্রিয়া। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার এখনো সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে ৯২ জন তাদের পঞ্চম জন্মদিন পালন করতে পারে না। তবে ১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে যে হারে শিশুমৃত্যু হয়েছে বর্তমানে তা প্রায় ৪৯ শতাংশ কমে এসেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে কম শিশু মৃত্যুহার রয়েছে লুক্সেমবার্গে। প্রতি হাজারে ২ জন। এছাড়া প্রতি হাজারে তিনজন শিশু মারা যায় ফিনল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সিংগাপুর ও সুইডেনে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে প্রতি হাজারে ৭ জন এবং ৫ জন শিশু মারা যায়।

প্রতি হাজারে সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- এঙ্গোলা (১৬৭ জন), সিয়েরা লিওন (১৬১ জন), চাদ (১৪৮ জন), সোমালিয়া (১৪৬ জন), মালি (১২৩ জন), কঙ্গো (১১৯ জন), নাইজেরিয়া (১১৭ জন), নাইজার (১০৪ জন), ক্যামেরুন (৯৫ জন), ইথিওপিয়া (৬৪ জন), গাম্বিয়া (৭৪ জন), ঘানা (৭৮ জন), হাইতি (৭৩ জন), কেনিয়া (৭১ জন), লেসেথো (৯৮ জন), লাইবেরিয়া (৭১ জন), পাকিস্তান (৮৬ জন), দক্ষিণ সুদান (৯৯ জন), সুদান (৭৭ জন), জাম্বিয়া (৮৭ জন) ও জিম্বাবুয়ে (৮৯ জন)।

শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৪১ শিশু মারা গেলেও পাকিস্তানে ৮৬ জন এবং ভারতে ৫৩ জন মারা যায়। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলংকায় ১০ জন, নেপালে ৪০ জন, ভুটানে ৩৬ জন এবং মালদ্বীপে ১০ জন শিশু মারা যায়। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার ছিলো ২০০৯ সালে ৫২ জন, ২০১০ সালে ৪৯ জন, ২০১১ সালে ৪৬ জন ও ২০১২ সালে ৪৩ জন (প্রতি হাজারে)। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শিশু মৃত্যুহার কমে আসার পেছনে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক উল্লেখ করার পাশাপাশি দেশগুলোর কিছু দুর্বলতার কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের সঠিক যত্ন নিলে অনেক নবজাতককে বাঁচানো যায়। প্রসবের আগে এবং নবজাতকের বয়স চার মাস থাকা অবস্থায় যত্ন নিতে হবে সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে অনেক মা উদাসীন থাকেন। নবজাতককে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা এবং ভালো স্বাস্থ্যের জন্য জন্মের পরপরই বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টিকেও অনেকে গুরুত্ব দেন না। এছাড়া জন্মের পর অনেক শিশুর জটিলতা নিরসনে ডাক্তারের কাছে নেয়া প্রয়োজনীয় হলেও অনেকে তা নেন না। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জন্মের প্রথম সপ্তাহে মাত্র ২০ শতাংশ শিশুর পরিবার প্রশিক্ষিত ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে পারে। শিশু মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধি, গর্ভকালীন অপুষ্টি, কিশোরী মায়ের গর্ভধারণ প্রভৃতি।

এদিকে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের মোট এক কোটি ২৭ লাখ শিশু মারা গিয়েছে। ২০১৩ সালে এসে তা ৬৩ লাখে দাঁড়িয়েছে। শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- গর্ভকালীন জটিলতা (১৭ শতাংশ), নিউমোনিয়া (১৫ শতাংশ), জন্মকালীন জটিলতা (১১ শতাংশ), ডায়রিয়া (৯ শতাংশ) ও ম্যালেরিয়া (৭ শতাংশ)। এছাড়া অপুষ্টিজনিত কারণেও শিশু মারা যাচ্ছে।