মেহেরপুরের মাদকব্যবসায়ীদের দুর্দিন

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলার বেশিরভাগ মাদকব্যবসায়ী এখন আত্মগোপনে। পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদকব্যবসায়ী-মাদকসেবীবের কারাদণ্ডের ঘটনায় এখন তারা রয়েছে চরম আতঙ্কে। সীমান্ত থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা শহর পর্যন্ত অনেকটাই প্রকাশ্যে চলা মাদকের আস্তানাগুলো এখন শূন্য প্রায়। নেই মাদকব্যবসায়ীদের সেই দাপট আর মাদকসেবীদের আনাগোনা।

ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই মাদকব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু এবার সে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। গত কয়েকদিন ধরে পুলিশের ব্যাপক অভিযানের কারণে আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপন করেছে বেশিরভাগ মাদকব্যবসায়ী। সীমান্ত থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত কোথাও আর চোখে পড়ছে না মাদকব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের সেই আনাগোনা। এমনটিই জানা গেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অবস্থান রয়েছে। তিনটি থানা, সবগুলো ক্যাম্প ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ কৌশলে আরো কিছু টিম মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে সব পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলছে যানবাহন চেকিং। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ অভিযানও চলছে। প্রতিদিনই মাদকব্যবসায়ী ও সেবীদের মাদকসহ আটক করে নিয়মিত মামলার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। জেলাকে মাদকমুক্ত করতে মাদকব্যবসায়ী ও মাদক সম্পর্কে তথ্য দিতে এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে গত এক সপ্তায় ১৩ জন মাদকব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ১০ দিন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড রয়েছে। মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কারাদণ্ড থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করেছে মাদকব্যবসায়ীরা।

সদর উপজেলার বাজিতপুর, বুড়িপোতা, গাংনী উপজেলার কাজিপুর ও রংমহলসহ সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে ক’দিন আগেও মাদকব্যবসায়ী ও ফেনসিডিলসেবীদের ব্যাপক আনাগোনা লক্ষ্য করেছেন গ্রামবাসী। এলাকাসূত্রে জানা গেছে, গোভিপুর মোড়, বুড়িপোতা মোড়, বাজিতপুর মোড়, বামন্দী বাজার ও কাথুলী এলাকায় প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান ও মোটরসাইকেল চেকিং চলছে। এতে ওই এলাকাগুলোতে মাদকসেবীদের আনাগোনা একেবারেই নেই।

এলাকা সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকেই গোভিপুর ও বাজিতপুর সড়কে মাদকসেবীদের ব্যাপক আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের অভিযান ও চেকিঙের কারণে ওই সড়কগুলো এখন মাদকসেবী শূন্য। তাই এমন অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানান এলাকার সচেতনমহল।

প্রশাসনের স্মরণীয় এ ভূমিকায় প্রশংসা করেছেন মাদকবিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগো মেহেরপুরসহ বিভিন্ন সচেতনমহল। সারা বছর মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের এমন ভূমিকা অব্যাহত এবং গ্রেফতার হওয়া মাদকব্যবসায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। অভিযানের পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে যাতে মাদক না আসতে পারে তাতে বিজিবির সদস্যদের আরো কঠোর অবস্থানের দাবি জানান এলাকাবাসী।