চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ সারাদেশে পশুর হাট জমজমাট
আলম আশরাফ: ঈদুল আজহা আসন্ন। আর মাত্র সপ্তা দেড়েক বাকি। জমে উঠেছে এলাকার পশুহাটগুলো। মোটাতাজাকরণ খামারগুলোর পাশাপাশি কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে মোটাতাজা করা গুরু বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এবারও গ্রামে গ্রামে সম্মিলিতভাবে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের পশুহাটের উদ্দেশে ছুটছেন গরু পালনকারীসহ ব্যবসায়ীরা। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশেরই ধর্মপ্রাণ সামর্থবান মুসলমান কোরবানির পশু কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার কোরবানি করার মতো গরুর দাম কেমন? খাসির মূল্য এবারও কি চড়া? এসব নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। গরু-খাসি দুটোরই দাম গতবারের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত বেশ চড়া।
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এলাকার পশুহাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। জেলা শহর, উপজেলা সদর ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন জমজমাটভাবে চলছে গরুর হাট। হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- চুয়াডাঙ্গা সদরে বরদগঞ্জে প্রতি শনিবার, সরোজগঞ্জে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ছাগলের হাট বসে। আলমডাঙ্গা উপজেলার মধ্যে আলমডাঙ্গা পৌর পশুহাট প্রতি বুধবার, জামজামি সোমবার, মুন্সিগঞ্জে মঙ্গলবার ছাগল ও বুধবার গরুর হাট, পারলক্ষ্মীপুর রোববার, গোকুলখালী শুক্রবার, হাটবোয়ালিয়া শনিবার পশুহাট বসে। দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি পশুহাট প্রতি সোমবার, জীবননগর উপজেলার জীবননগর পৌর এলাকায় প্রতি রোববার ও শিয়ালমারী প্রতি বৃহস্পতিবার পশুহাট বসে। মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর পৌর এলাকায় প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার, বারাদী বৃহস্পতিবার ও শনিবার, গাংনী উপজেলার গাংনীতে রোববার ও বৃহস্পতিবার ও বামন্দীতে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার, মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে প্রতি বুধবার ও রোববার ছাগলের হাট বসে। ঝিনাইদহের বৈডাঙ্গায় প্রতি মঙ্গলবার, হরিণাকুণ্ডুতে প্রতি শুক্রবার, ভবানীপুরে বৃহস্পতিবার, কোটচাঁদপুরে বৃহস্পতিবার, খালিশপুরে শুক্রবার, স্বরুপপুরে প্রতিদিন, পুরোপাড়ায় মঙ্গলবার, কালীগঞ্জে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার এবং বারবাজারে শনিবার পশুহাট বসে থাকে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এছাড়া কুষ্টিয়ার ইবি এলকার বালিয়াপাড়ায় প্রতি শনিবার, উজানগ্রামে শনিবার ও মিরপুর উপজেলার পাটিকাবাড়ি প্রতি শুক্রবার পশুহাট বসে।
ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি থাকায় ক্রেতারা যেমন ছুটছেন বিভিন্ন পশুহাটে তেমনি বিক্রেতারাও কাঙ্ক্ষিত লাভের আশায় তাদের পশু নিয়ে ছুটছেন হাটগুলোতে। ক্রেতা-বিক্রেতার চাপে পশুহাটগুলোও জমে উঠেছে। তবে গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই দেদারছে আসছে ভারতীয় গরু। সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন হাট-বাজারে মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে ওইসব গরুর। এসব গরু কোনো প্রকার রাজস্ব ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আসছে। এর মধ্যে রোগাক্রান্ত গরু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হলেও বিষয়টি নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় গরুর প্রতিযোগিতায় হুমকির মুখে পড়ছে দেশি গরু। এভাবে গরু আসতে থাকলে হাজার হাজার খামারীর লোকসান গুনতে হবে বলে জানান খামারীরা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি পশুহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ হাজার গরু ও ছাগলের আমদানি হয়েছে। একটি গরুর সর্বোচ্চ দাম হাঁকা হয় ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। হাটে প্রকার ভেদে গরু কেনাবেচা হয়েছে ৩০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। বিক্রেতারা জানান, আজ (গতকাল) হরতালের কারণে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় বেচা-কেনা কম।
অপরদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পুলিশ ও বিজিবিকে ম্যানেজ করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে। চোরাইপথে আসা ভারতীয় এসব পশুর বেশির ভাগই রোগাক্রান্ত। এসবের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাটগুলোতে নেই কোনো ব্যবস্থা। হাটগুলোতে গত বছরের মতো এবারও দেশি গরুর কদর বেশি।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অধিক মুনাফার আশায় নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন ও স্টেরয়েড হরমন জাতীয় ইনজেকশন প্রয়োগ করে দেদারছে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দিয়ে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে একদিকে যেমন প্রাণীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে এসব গরুর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘমেয়াদে শুধু পঙ্গুত্ববরণই নয়- কিডনি, লিভার নষ্ট ও বন্ধাত্বসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ফলে কোরবানির গরু কেনা নিয়ে শঙ্কিত ক্রেতারা।
এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার পশুর শরীর পরীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর কোরবানির হাটে চিকিত্সক নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট করেছেন। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর শরীরে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কি-না তা জানতে চিকিত্সক নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ৩ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন হাটে চিকিত্সক নিয়োগে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।