অভাব ঘোচানো যুদ্ধাস্ত্রই যখন যন্ত্রণা

 

সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্নে তথা অভাব ঘোচানোর যুদ্ধে যাদের হাতিয়ার শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান, তারা সড়ককেই শুধু মৃত্যুপুরি করছেন না, নিজেরাও নিজেদের প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুটছেন। একদিকে বেকার সমস্যা প্রকট, অপরদিকে অবৈধযান তৈরির কারখানা বাধামুক্ত। ফলে দিন দিন সড়কে আশঙ্কাজনক হারে অবৈধযানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে যেন পাল্লা দিয়ে। প্রাণ ঝরছে। পঙ্গু হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। প্রতিদিন যে হারে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও অঙ্গহানি এ অবৈধযানের কারণে ঘটছে তার কতোটুকুই আর কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়? বাস-ট্রাক মালিকদের স্বার্থান্ধের আন্দোলনের মুখে নয়, বাস্তবতার আলোকেই অবৈধযান উচ্ছেদে আন্তরিক হওয়া জরুরি।

 

শ্যালোইঞ্জিন মূলত কৃষি সেচকাজের জন্যই আমদানি করা। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই শুল্ক নেয়া হয় না বললেই চলে। সেই ইঞ্জিনের বহুবিধ ব্যবহারে নদী ও সড়ক যোগাযোগ তরান্বিত করেছে বলে কেউ কেউ দাবি করলেও তার বৈধতা দেয়া হয়নি। কেন? নিরাপদ নয় বলেই। নদীপথে যেমন ঝুঁকি, তেমনই সড়কেও রাক্ষসরূপী। সে কারণেই দেশের উচ্চাদালত থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান সড়কে চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আসছে। এ নির্দেশ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পালন করা হচ্ছে? যেহেতু দেশে বেকার সমস্যা প্রকট, দিন দিন বেড়েই চলেছে, সেহেতু অনেকেই জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্বেও অবৈধযান নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন। দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন, মানুষ মারছেন, নিজেও মরছেন। পঙ্গু হয়ে পরিবারের ঘাড়ে বোঝাও হচ্ছেন অসংখ্য চালক-আরোহী। অবাক হলেও সত্য যে, দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরও অবৈধযানচালকের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের তেমন নজির মিলছে না। অবস্থাদৃষ্টে বলতে দ্বিধা নেই যে, অবৈধযানচালকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে বরাবরই যেন বাড়তি দরদ। আইন প্রয়োগে দরদী হওয়ার খেসারত সমাজকেই দিতে হচ্ছে। অবশ্যই আর্থসামাজিক অবস্থা অস্বীকার করা যায় না। অবৈধযান রয়েছে বলেই কৃষিজাত পণ্য থেকে শুরু করে সব কিছুরই আভ্যন্তরীণ বা আন্তঃজেলা পরিবহন খরচ আকাশচুম্বি হচ্ছে না। সকলেই যে পঙ্গু হচ্ছে তাও নয়। কতোজন তার সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন, কতোজন মারা গেছেন, আর কতোজন পঙ্গু হয়ে তার পরিবারে উল্টো বোঝা হয়েছেন? এ পরিসংখ্যান নেই। পরিবারের অভাব ঘোচাতে বা বেকারত্ব ঘোচাতে অবৈধযান নিয়ে রাস্তায় নেমে পঙ্গু হয়ে উল্টো বোঝা হওয়া যোদ্ধার সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনই অবৈধযানের সওয়ার হয়েও অনেকে পঙ্গুত্বের অভিশপ্ত বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। পত্রপত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের খবর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক চালকের করুণ দশা তুলে ধরা হয়েছে।

 

প্রতিকার? পুলিশ প্রশাসন পারতো, এখনও পারে। যে হারে অবৈধযানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা রোধ করতে না পারলে পরবর্তীতে পুলিশ কেন, জাতির আস্থা অর্জনের জলপাই রঙের গাড়ি নামালেও নাকানি-চুবানি খেতে হবে। সে কারণেই পূর্বে যা করা হয়নি, পারা যায়নি তা এখন পারার মতো করে সরকারকে কাছা বেঁধে নামতে হবে। বেকার সমস্যা দূর করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা যেমন জরুরি, তেমনই বৈধ গাড়ি আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে শুল্ক হ্রাস করতে হবে। অবৈধযানের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ পরিবহন মাশুল স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। বাড়াতে হবে বৈধ পরিবহন সুবিধাও।

পুনশ্চঃ সময় গেলে সাধন হবে না….।