অপবাদ সইতে না পেরে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টির আত্মহত্যা : সহপাঠীদের বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গাবোয়ালমারীতে বান্ধবর প্রেমে সাহায্য করার অভিযোগে মারপিটসহ হুমকিধামকি : অভিযুক্ত চাচাতো নানি

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের পূর্বপাড়ায় ৫ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী বৃষ্টির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঘরের আড়া থেকে গলায় ফাঁস দেয়া ঝূলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। আত্মহ্যার প্রচারণার অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে গ্রামের সহপাঠীরা গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর নেপথ্যে হত্যা রহস্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে। পুলিশ বলেছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই সব স্পষ্ট হবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বোয়ালমারী গ্রামে পূর্বপাড়ার শহিদুলের মেয়ে স্থানীয় স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি খাতুনের (১১) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার নানাবাড়ির ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরিবারের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছেন। বৃষ্টির চাচাতো নানা জাফরের স্ত্রী হালিমার বিরুদ্ধে বান্ধবীর প্রেমে সাহায্য করা অভিযোগে তাকে মারধর করায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হয়। বলা হয় মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে ও মারধরের ভয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। এ তথ্য পেয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে হালিমাকে গ্রেফতারের দাবি তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

গ্রামসূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী গ্রামের আনোয়ারের ছেলের নিজামুলের (১৫) সাথে একই গ্রামে মানুয়ারের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রীর (১১) প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত কয়েক দিন বৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রেমে সাহায্য করার অভিযোগ তুলে বৃষ্টির চাচাতো নানি জাফরের স্ত্রী হালিমা তাকে মারধর করে। এছাড়া গতপরশু বৃষ্টির স্কুলে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বৃষ্টিকে আবারো মারধর করেন হালিমা। মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন তিনি। মিথ্যা অপবাদ ও মারধর সইতে না পেরে সকাল ৯টার দিকে সবার অজান্তে নিজ ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে তার মামাসহ নিকজনেরা জানান। পরিবারের লোকজন বৃষ্টির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশে খবর সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের এসআই নাসিরুল ইসলাম লাশ উদ্বার করে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে নেন। এ সময় স্কুলছাত্রীর স্কুলের সহপাঠীরা গ্রামের রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করে। আত্মহত্যায় প্রচারণার অভিযোগ তুলে সহপাঠীরা অভিযুক্ত হালিমার বাড়ির গেটে ভাঙচুর করার চেষ্টা চালায়।

এ ব্যাপারে স্কুলছাত্রীর ভাই সবুজ অভিযোগ করে জানায়, ছোটবেলায় পিতা আমাদের ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে। মা ঢাকায় থাকে। আমি ট্রাকের হেলপার। বাড়িতে আসি মাঝে মাঝে। বাড়িতে মামা-মামিদের সাথে একা থাকতো ছোট বোন বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি। গ্রামের জাফরের নাতনি নিশিতার সাথে আনোয়ারের ছেলে নিজামুলের প্রেমসম্পর্ক অনেক দিনের। সেই প্রেমে সাহায্য করার অভিযোগ তুলে প্রায় বৃষ্টিকে মারধর ও হুমকি প্রদান করে আসছিলো হালিমা। গতকাল সকালে মারধর ও খুনের হুমকিতে ভয় পেয়ে সে আত্মহত্যা করে। আমি বোন হত্যার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা সুলতানা জানান, গতপরশু বোয়ালমারী গ্রামের জাফরের স্ত্রী হালিমা স্কুলে উপস্থিত হয়ে স্কুলছাত্রী বৃষ্টির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধরের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে হুমকি প্রদান করেন। এছাড়া হালিমা স্কুলের শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

এ ব্যাপারে স্কুলছাত্রীর স্কুলের শিক্ষক ও সাহপাঠীসহ গ্রামবাসী বিচারের দাবি তুলেছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্বার করে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করে। গতকাল রাত ৯টায় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে গ্রামসূত্রে জানা গেছে।