অবৈধভাবে পানিপথে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে জাহাজ থেকে ফেলে আলমডাঙ্গার বড়পুটিমারীর হুমায়নকে হত্যার অভিযোগ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের বড়পুটিমারী গ্রামে চলছে শোকের মাতম। মানবপাচারচক্রের সদস্যর সাথে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে দু লাখ টাকায় পানিপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে থাইল্যান্ড সাগরে জাহাজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই এ তথ্য জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে দালালচক্রের দাবি সে অসুস্থ রয়েছে। পরিবারের লোকজন তার সাথে মোবাইলে কথা বলতে চাইলে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে। চাচাতো ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কী ঘটেছে চাচাতো ভাইয়ের ভাগ্যে। দু পরিবারের মধ্যে চলছে অজানা আতঙ্ক।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা বড় পুটিমারী গ্রামের কলম আলীর ছেলে মাদরাসা শিক্ষক হুমায়নের (২৭) সাথে টেকনাফের জাহাঙ্গীরের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ২০ দিন আগে অবৈধ পথে মালয়েশিয়ার নাম করে বের হন। একই গ্রামের আলমের ছেলে চাচাতো ভাই ওবাইদুর (১৫) সাথে নিয়ে যায়। গত ১৬ দিন আগে একটি জাহাজে উঠে মানবপাচারচক্রের সাথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। গত পরশু সকালে হুমায়নের সাথে থাকা চাচাতো ভাই ওবাইদুর মেবাইলফোনে জানান, তার ভাইকে মেরে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। গত ৮ দিন আগে বড় ভাই হুমায়নের পানি পিপাসা লাগলে তারা দু ভাই শিপের ৩য় তলায় পানি পান করতে যান। পানি খেতে না দিলে শিপের লোকজনের সাথে হুমায়নের গণ্ডগোল বাধে। এ সময় শিপের লোকজন তাকে প্রচণ্ড মারধর করে জাহাজ থেকে সাগরে ফেলে দেয়। পানিতে পড়ে হুমায়নের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় চাচাতো ভাই ওবাইদুর। হুমায়নের সাথে থাকা অপর ব্যক্তি আলমডাঙ্গার জোড়গাছা গ্রামের ভাদু।

অপর দিকে মালয়েশিয়ার দালালচক্র থাইল্যান্ডে অবৈধ যাত্রীদের নামাতে এসে হুমায়নকে পাইনি বলে মোবাইলফোনে জানায়। গতকাল সন্ধ্যায় টেকনাফের মানবপাচার চক্রের হোতা দালাল জাহাঙ্গীর মোবাইলফোনে হুমায়নের পরিবারের লোকজনকে জানায়, হুমায়ন বেঁচে আছে। সে খুবই অসুস্থ। হুমায়নের সাথে কথা বলতে চাইলে মোবাইলফোন বন্ধ করে দিয়েছে।

মোবাইলফোনের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে হুমায়নের চাচাতো ভাই ওবাইদুর জানালে পরিবারজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সন্তানের মৃত্যুর খবরে হুমায়নের পিতা-মাতার আজাহারিতে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ন টেকনাফে থেকে মাদরাসায় লেখাপড়া করতেন। সেখান থেকেই দালাল জাহাঙ্গীরের সাথে পরিচয় হয় তার। হুমায়ন আলমডাঙ্গা জামজামির একটি মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। তাকে বিভিন্নভাবে ফুঁসলিয়ে জাহাঙ্গীর অবৈধপথে মালয়েশিয়ার পথে নেয়। বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে চাচাতো ভাই ১০ম শ্রেণির ছাত্র ওবাইদুর ও জোড়গাছা গ্রামের ভাদুকে সাথে নিয়ে পানি পথে মালয়েশিয়ার পথে যাওয়ার সময় থাইল্যান্ড সাগরে মেরে ভাসিয়ে দিয়েছে হুমায়নকে। তবে ওবাইদুর ও ভাদুর ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা সম্ভব হয়নি। ওবাইদুরের পরিবারের লোকজন জানায়, এখনো দুজন ওই দালালচক্রের হাতে। দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে বাকি দুজনকে মেরে ফেলতে পারে বলে দালাল জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছে না।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বড়পুটিমারী গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। সন্তান হারিয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছে না হুমায়নের পিতা-মাতা। ওবাইদুর ও ভাদুর পরিবারের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।