খেলতে গিয়ে গলায় ফাঁস বেঁধে শিশুর মৃত্যু ? দৃষ্টির ভাব বলতেই দানা বাধলো সন্দেহ

চুয়াডাঙ্গার পীরপুরে অসুস্থ পিতার অবুঝ কন্যা কাজলীর অপমৃত্যু : রহস্যের গন্ধে পুলিশ উদ্ধার করেছে লাশ

 

আলুকদিয়া প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পীরপুরে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী কাজলী খাতুনের (৭) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে মায়ের ব্লাউজ গলায় ফাঁস দিয়ে জানালায় ঝুলে সে মারা গেছে বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করে বলে, ওর জিন দৃষ্টির ভাব ছিলো। এ দাবির মুখে পুলিশ অবশ্য হাড়োকান্দির স্কুলছাত্রী ভুন্দির মতো ভুল করেনি। মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে প্রাথমিক তদন্ত শুরুর পাশাপাশি শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার করেছে। আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে পীরপুরে শিশু কাজলীর দাফনকাজ সম্পন্ন করা হতে পারে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের আবুল কালামের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দু সন্তানের মধ্যে মেয়ে কাজলী খাতুন বড়। সে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। তার পিতা আবুল কালাম অসুস্থ। প্রতিবেশীদের কয়েকজন এ তথ্য দিয়ে বলেছে, অসুস্থ স্বামীকে সেবা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন স্ত্রী। এরই মাঝে ফাঁস ফাঁস খেলতে গিয়ে গলায় ফাঁস বেঁধে মারা যায় তাদের ৭ বছরের সন্তান কাজলী। প্রথমে মায়ের ব্লাউজ গলায় বেঁধে জালানায় ঝুলে ফাঁস লেগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করলেও পরে অবশ্য বলেন, ওড়না দিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁস লেগে তার মৃত্যু হয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, সমবয়সীদের সাথে ফাঁস খেলা খেলতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। সমবয়সীরা কারা? এর জবাব মেলেনি। এক পর্যায়ে ঘটনাটি জিনের আছর বলেও চালানোর চেষ্টা চলে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনার বর্ণনা শোনেন। সন্দেহ হয়। আত্মহত্যা প্রবণ এলাকায় কারো আত্মহত্যার গল্প শুনে গলায় ফাঁস দিয়ে খেলতে গিয়ে শিশুর প্রাণহানি অসম্ভব না হলেও জিন বা দৃষ্টিরভাব প্রসঙ্গ সামনে আসতেই পুলিশ অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে পড়ে। এরই অংশ হিসেবেই উদ্ধার করা হয় শিশুর লাশ। নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। আজ মঙ্গলবার হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ভুন্দির লাশ গত ১ সেপ্টেম্বর পুকুর থেকে উদ্ধারের পর জিনে মেরে পুকুরে ফেলেছে দাবি করা হলেও তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে বলে জোরগুঞ্জন ওঠে। জিনে মেরেছে বলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে। পুলিশ স্কুলছাত্রী ভুন্দির মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বদলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের পথে হাঁটে। এতেই ঘটে বিপত্তি। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রতিবেদন। গ্রামজুড়ে মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে আন্দোলন শুরু হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। একটি পক্ষ ঘটনাটি থামাতে নানামুখি উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত মামলা হয়েছে। আদালত তিনদিনের মধ্যে লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। এ অবস্থায় পীরপুরের শিশু কাজলীর প্রকৃত মৃত্যুরহস্য উন্মোচনের আগে পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতির মতো ঝুঁকি নিতে রাজি হয় কী করে?

Leave a comment