তারেক রহমানের বক্তব্যে ক্ষুব্ধজামায়াত ও সমমনারা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ধর্মভিত্তিকরাজনৈতিক দল নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যকেভালোভাবে নেয়নি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিকদলগুলো। জোটে থাকায় তারা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছে না,আবারচুপ করে বসে থাকতেও পারছে না। এ নিয়ে তারা উভয় সঙ্কটে পড়েছে। তবে বিএনপিনেতাদের কাছে তারা তাদের অসন্তোষের কথা গোপন করেননি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,তারেকের বক্তব্যে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকইসলামী দলগুলো অনেকটা অস্বস্তিতে পড়েছে। তবে জোটে ভাঙনের আশঙ্কায় তারাপ্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে এ বক্তব্যের প্রতিবাদ না করায়আবার অন্য ধর্মীয় সংগঠনগুলোর তোপের মুখে আছে তারা।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমানবলেছেন,‘ধর্মকে কেন্দ্র করে কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। বাংলাদেশেরধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ এ বক্তব্যের পরই বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে তীব্রপ্রতিক্রিয়া হয়। তবুও ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ইসলামী,ইসলামী ঐক্যজোট ওখেলাফত মজলিশ প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু গোপনে বিএনপিকেতাদের ক্ষোভের কথা বলেছে।

সূত্র জানায়,তারেক রহমানের এ বক্তব্যে সবচেয়ে নাখোশ হয়েছে জামায়াতেইসলামী। তারা বিএনপি নেতাদের কাছে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে বলেছেন,ক্রান্তিকালীন এ সময়ে তারেক রহমানের এ বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। এর ফলেনিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার সুযোগ পাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। অন্যদিকেজামায়াতবিরোধী অথচ ধর্মভিত্তিক সংগঠন তারা এরই মধ্যে জামায়াতকে বিভিন্নভাবেচাপ দিচ্ছে এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করার জন্য। এ অবস্থায় বিএনপিনেতারা তাদের জানিয়েছেন,এটা শুধুই রাজনৈতিক বক্তব্য। তারেক রহমান সাধারণতপুরনো বিষয়ের রেফারেন্স টেনে বক্তব্য দেন। এমনও হতে পারে কোনো রেফারেন্সথেকে এমন কথা বলা হয়েছে। পরে তা বিকৃতভাবে প্রচারিত হয়ে থাকতে পারে। প্রকৃতবিষয়টি না জেনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না।

সূত্রগুলো বলছে,এ বক্তব্যের পর কোনো ধরনের অবস্থান না নেয়ায় ঘরে-বাইরেপ্রচণ্ড চাপে পড়ে জামায়াত। ধর্মভিত্তিক অন্য সংগঠনগুলো তাদের জানিয়েছে এব্যাপারে কোনো কথা না বললে জনগণের কাছে আবারো প্রমাণিত হবে জামায়াত শুধুনিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে থাকে। এ কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেওজামায়াতের দু-একজন নেতা প্রচারমাধ্যমে এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে বক্তব্যদিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তারেকের এ বক্তব্যেরপ্রতিবাদ করেন জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য আতাউর রহমান। বিষয়টি প্রচারহওয়ার পর অন্য সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আর কোনো কথা বলতেরাজি হননি। তিনি জানান,এ ব্যাপারে তিনি আর কোনো কথাবলবেন না। বিএনপি তার এই বক্তব্যে আপত্তি করেছে বলেই প্রচারমাধ্যমে তিনিআরো কথা বলতে চান না বলেও জানা গেছে।

এদিকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর কাছে তারেকেরবক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা তারেকের ব্যক্তিগত বিষয়।কেন বলেছেন তা তিনি ভালো বলতে পারবেন।জোটের নেতা হিসেবে এ বক্তব্য দিলেও তারই আরেক সংগঠন নেজামী ইসলামী পার্টিরপক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠান নেজামী। বিবৃতিতে তারেক রহমানের ওই বক্তব্যেরউদ্ধৃতি দেয়া না হলেও বলা হয়,ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অপরিহার্যতাগুরুত্বের সাথে উপলব্ধি ও অনুধাবন করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানইরাজনৈতিক দল বিধির অধীনে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল গঠনেরঅনুমতি দেন।

আরো বলা হয়,জনগণের অস্তিত্ব ও স্বাধীন মর্যাদা সবকিছুই ইসলাম ধর্মভিত্তিকজাতিসত্তার ওপরই নির্ভরশীল। তাই ইসলাম ধর্মকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবেবাংলাদেশের অস্তিত্বকে যারা ব্যাখ্যা করেন তারা হচ্ছেন জ্ঞানপাপী।এদিকে জোটের আরেক প্রতিষ্ঠাতা শরিক দল খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিকসম্পাদক মুহাম্মদ মুনতাসির আলী বলেন,তারেক রহমানের বক্তব্যে জোটেরঅভ্যন্তরে জটিলতা তৈরি হবে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান,সিনিয়রভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্যে খুশি তারা। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতেরআচরণ তাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। সরকারের সাথে জামায়াতের আঁতাতের একগন্ধ পাচ্ছেন তারা। এর প্রেক্ষিতে তারেক রহমান হয়তো জামায়াতের প্রকৃতবিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে এমন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন বলেও ধারণা তাদের।আর জামায়াতকে জোটে ধারণ করতে নারাজ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। তাদের বক্তব্যহচ্ছে,জামায়াতের অপকর্মের কারণেই একের পর এক রাজনৈতিক কৌশলে মার খেয়েছেবিএনপি। জামায়াতের কারণেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানেরভূমিকা নিয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল। সব মিলে জামায়াতযদি এই ইস্যুতে নিজেরাই জোট থেকে বের হয়ে যায় তাহলে অনেকে খুশি হবেন বলেওকেউ কেউ মতামত ব্যক্ত করেন।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন,তারেক রহমান প্রকৃত অর্থে এ বিষয়ে কী বলতেচেয়েছেন তা কিছুটা অস্পষ্ট। এর ফায়দা নিতে ক্ষমতাসীনরা ষড়যন্ত্র করে থাকতেপারে।
তারেকের বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটিরসদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন,বিষয়টি তারেক রহমান কেন বলেছেনতার সঠিক ব্যাখ্যা তার কাছে পাওয়া যাবে। তবে দলের একজন কর্মী হিসেবে এটিবলা যায়,ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এক ধরনেরবিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাহলে তো পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি হবে। দেশটিতেযা ঘটছে,তা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণেই।তিনি আরো বলেন,ধর্ম হিসেবে অবশ্যই তিনি ইসলামের পক্ষে। কিন্তু রাষ্ট্রপরিচালনায় বর্তমান পৃথিবীতে ধর্ম কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ভাবতে হবে।