স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ আয়োজিত যৌথ সমাবেশে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা গুলি ছোড়ে এবং ধারালো অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর উপলক্ষে বের করা মিছিল থেকে এ তাণ্ডব ঘটায় ক্যাডাররা। হামলায় আহত হন কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও কোতোয়ালি থানার ওসি আখতার হোসেনসহ কমপক্ষে ২৫ জন। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এমন তাণ্ডব চলার পর ব্যবসায়ী ও পথচারীরা দিগিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। উত্তেজনা প্রশমিত না হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা। হামলার প্রতিবাদে আজ সিলেটে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কোর্ট পয়েন্টে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদের পূর্বনির্ধারিত জনসভা চলছিলো। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বের হওয়া ছাত্রলীগের একটি মিছিল কোর্ট পয়েন্ট অতিক্রম করছিলো। ওই সময় মিছিল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সমাবেশে হামলা চালায়। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা মঞ্চে উঠে আকস্মিক হামলা শুরু করলে সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাম হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। হামলার পর কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ আবার সমাবেশ করতে গেলে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ফের হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় ক্যাডারদের প্রতিহত করতে গেলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন কোতোয়ালি থানার ওসি আখতার হোসেন। এ হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাব-পুলিশ অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিটি কর্পোরেশনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সেখান থেকে সুরমা পয়েন্টের দিকে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ। খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাহেদ ও জগলু চৌধুরীসহ নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
সরকার গণতন্ত্র হত্যা করতে চায়: সিলেটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জনসভায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। রোববার পৃথক বিবৃতিতে ক্ষোভ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। রোববার গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু এক বিবৃতিতে বলেন, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা প্রমাণ করে এ সরকার ও তাদের আশ্রিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ভিন্নমত প্রকাশে বাধা দিয়ে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করতে চায়। জনগণকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেল করতে হবে। ভিন্ন বিবৃতিতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, মহাজোট সরকারের সময় যতই শেষ হয়ে আসছে, ততই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বিকল্প শক্তি-সমাবেশের প্রতি মানুষের সমর্থন দেখে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে তারা এখন হামলা পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু হামলা-মামলা-নির্যাতন করে বিকল্প গড়ার প্রক্রিয়াকে কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। এছাড়া বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি শামছুজ্জামান সেলিম, কার্যকরী সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, বাংলাদেশ প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক আবদুর রউফ এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি এসএম শুভ, সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক পৃথক বিবৃতিতে রোববারের হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি করেছেন।