ইবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিশালাকৃতিরএকাডেমিক ভবনগুলোতে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সারি সারি গাছের দেখা মিলছে নাপ্রেমিক জুটিদের। চায়ের দোকানগুলোতে নেই আড্ডার জটলা, খেলা পাগলদের মাঠগুলোএখন ফাঁকা, ছাত্র সংগঠনের দলীয় টেন্টগুলো পড়ে আছে। আর মানুষ গড়ার কারিগরছুটেছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে। সবমিলিয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামীবিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। যাদের পদচারণায়কখন দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা আবির নামে সেটাও বুঝা মুশকিল সেই শিক্ষার্থীদেরছাড়া ক্যাম্পাস যেন মৃত প্রায়। ২৪ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেছাত্রলীগ-পুলিশ সংঘর্ষের জের ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের এমন গা বাঁচানো সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এবং হতাশানিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঘন ঘন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায়ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদেক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রশিবির। এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগ দুপুর১২টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। ডায়না চত্বর হয়ে মিছিলটি ক্যাম্পাসেরপ্রধান ফটকে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাসে ভাঙচুর চালায়। সেখান থেকেতারা প্রশাসন ভবনের সামনে থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ডাবল ডেকার বাসভাঙচুর এবং দু পুলিশ সদস্যকে মারধর করে। এর কিছু পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপ্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার এবং প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানেরগাড়ি লক্ষ্য করে ইট মারে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বরতপুলিশ সদস্যরা ছাত্রলীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। এতে ৬ পুলিশসদস্যসহ ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মী আহত হয়।

এদিকে পুলিশ কর্তৃক ছাত্রলীগেরওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেঅনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতেওইদিন রাতে ভিসির বাসভবনে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিঙের মাধ্যমে ৮ সেপ্টেম্বরপর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। পরদিন ২৫ আগস্ট দুপুর ১২টার মধ্যেহল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ফলে কোলাহলপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেরসর্বত্র শুনশান নীরবতা। কোথাও নেই শিক্ষার্থীদের জটলা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়প্রশাসনের হঠাত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে নানামন্তব্য করেছেন। ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন ক্ষোভ প্রকাশ করেবলেন, কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ করে দেয়া এটি আমাদেরবিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলেই প্রশাসনেরকর্তাব্যক্তিরা তাদের গদি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। যার কারণেসেশনজটে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

এদিকে ঠুকনো অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেদেয়ায় বিরক্ত এবং উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল। খুলনা থেকে পড়তে আসা ইবির বাংলাবিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফেরদাউসুর রহমান সোহাগের বাবা তোফাজ্জেল হোসেনবিরক্তির সুরে বলেন, সন্তানদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে পাঠিয়ে আমাদেরসবসময় চিন্তায় থাকতে হয়। না জানি কখন কি ঘটে যায়। আর বর্তমানে ইসলামীবিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রটা আরও খারাপ। সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিয়ে আমরাউদ্বিগ্ন।