মজুদ রয়েছে ২৭ কোটি টাকার ইউরিয়া সার
শাহনেওয়াজ খান সুমন: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাফার (বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার) সরকারি সার গোডাউনে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ইউরিয়া সার মজুদ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে মজুদ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ২৭ কোটি টাকার ইউরিয়া সার। তাই এসব সারের গুণগতমান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বাফা সার গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা ৮ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু এই গোডাউনের ভেতরে মজুদ রাখা হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিকটন সার। আর গোডাউনের বাইরে পড়ে আছে সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার।
জানা যায়, কৃষিপ্রধান ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার জেলার ইউরিয়ার সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে সরকারিভাবে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে প্রায় ৬ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় বাফা সার গোডাউন। পাকশিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এনে এখানে শুধু ইউরিয়া সার মজুদ রাখা হয়। যা অত্র অঞ্চলের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু বাফা সার গোডাউনটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। ২২৪ জন সার ডিলার কালীগঞ্জ বাফার গোডাউন থেকে ইউরিয়া সার উত্তোলন করেন। খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এই ইউরিয়া সারগুলো। ফলে একটু বৃষ্টিতেই সারের গাদার নিচে জমে থাকছে পানি। ফলে গলে গলে নষ্ট হচ্ছে সার।
অন্যদিকে গোডাউনের বাইরে ত্রিপল দিয়ে দিনের পর দিন সার ঢেকে রাখার ফলে রোদে সার ঘেমে নষ্ট হচ্ছে এর গুণগতমান। সব মিলিয়ে এখানে মজুদ অবস্থায় পড়ে রয়েছে ২৭ কোটি টাকার ইউরিয়া সার।
এদিকে বেহাল দশা সার গোডাউনের। সার মজুদ রাখার জন্য নেই প্রয়োজনীয় উপকরণ। গোডাউনের ভেতরের লাইটগুলো নষ্ট অনেক দিন ধরেই। আর চারপাশের জানালার অনেক স্থানেই রয়েছে ছোট-বড় ভাঙ্গা। হরহামেশাই আলো-বাতাস, পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে সার।
দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট গোডাউনের ছাদ। ফলে কার্পেট দিয়ে ছাদ ঢেকে রাখা হয়েছে। এতে বৃষ্টিতে কার্পেটের ফুটো দিয়ে পানি পড়ছে। আর রোদে কার্পেট ঘেমে পানি পড়ছে মজুদ সারের ওপর। যাতে নষ্ট হচ্ছে এই মজুদ ইউরিয়া সার। তবুও কর্তৃপক্ষের বিক্রির উদ্যোগ নেই মজুদ সারগুলোর। নেই গোডাউন সংস্কারের উদ্যোগ।
বাফা সার গোডাউনের ইনচার্জ আব্দুল লতিফ এ সব সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গোডাউনের যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা সংস্কারের কাজ চলছে এবং অতি তাড়াতাড়িই শেষ হবে। সার মজুদ ও বিক্রি না করার বিষয়ে তিনি জানান, ইউরিয়া সার সাধারণত প্রতিমাসে ‘বিসিআইসি’ (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন) ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। আর চলতি মাস প্রায় শেষ। সুতরাং সামনের মাস না আসা পর্যন্ত এই সার বিক্রির কোনো উপায় নেই। তবে গোডাউনের ভেতরের সার বিক্রি না হওয়া ও দিনের পর দিন পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে সার গোডাউনের শ্রমিক সর্দার বাহাজ্জেল মণ্ডল জানান, গোডাউনের ভেতরের সারগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এ সারগুলো আগে বিক্রি করা প্রয়োজন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ইউরিয়া সার ফসলে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। এ সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ৪৬ পার্সেন্ট। মূলত এ উদ্দেশেই ফসলের ক্ষেতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ইউরিয়া সারে মজুদ অবস্থায় পড়ে থেকে যদি পানি লাগতে থাকে তাহলে এবং একটানা রোদে পড়ে থাকলে সারের নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায়। আর ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকলে তা ফসলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। নাইট্রোজেন কম থাকলে ফসল ঠিকমতো বেড়ে ওঠেনা, পরিপুষ্টও হয়না। ফলে ফলন অনেক কম হয়।
এদিকে বাফা গোডাউনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এখান থেকে ডিলারদের কাছে ৭শ টাকা মণ দরে ইউরিয়া সার বিক্রি করা হচ্ছে। তারা কৃষকের কাছে সরকার নির্ধারিত ৮শ’টাকা মণ বিক্রি করবেন। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাজারে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।