হরিণাকুণ্ডুর চরমপন্থিকে চুয়াডাঙ্গায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন

কুতুবপুরের মাঠে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ : পরিচয় উন্মোচনে সহায়ক হলো পকেটে থাকা সেলফোন 

 

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর গ্রাম সংলগ্ন মাঠে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে কুতুবপুর দাসপড়া দয়াচারের মাঠের একটি ধানক্ষেতের নিকট থেকে নিহত ব্যক্তির ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আব্দুল হক ওরফে সাহেব আলীর ছেলে রাসেল। পুলিশ বলেছে, রাসেল ছিলো চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অথবা চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গতকালই লাশ উদ্ধার করে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার নিকটজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়। সদর থানায় মামলা রুজু হলেও গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ তেমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী মো. ইব্রাহিম বলেছেন, খুনের নেপথ্য উন্মোচনে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘাতকচক্রের সন্ধানে কৌশলে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, নিহত রাসেল ছিলো এলাকার আতঙ্ক। সে নিজেকে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতো। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন ও নারী নির্যাতন ধারায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। পক্ষান্তরে রাসেলের ভাই হাসান লাশ উদ্ধারের সময় বলেছে, রাসেল কখনো রাজমিস্ত্রির জোগালে, কখনো পানবরজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। মাঝে মাঝে বাড়িতেও থাকতো না। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে বাড়ি ফেরেনি।

জানা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ফতেপুর গ্রামটি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার তিওরবিলা গ্রামের অদূরবর্তী। পাশাপাশি দুটি গ্রামের মাঝে রয়েছে বিশাল বিল। তিওরবিলা থেকে কুতুবপুরের দূরুত্ব আনুমানিক ৫ কিলোমিটার। কুতুবপুর দাসপাড়া দয়াচরের মাঠের কয়েক কৃষক গতকাল শুক্রবার এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে চমকে ওঠেন। তারা গ্রামবাসীকে খবর দেন। খবর দেয়া হয় কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়িতে। সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী পুলিশ সুপার নওশের আলী। প্রথমে লাশের পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও তার পরনের জামার পকেটে থাকা সেলফোন তথা মোবাইলফোনের মাধ্যমেই উন্মোচন করা হয় পরিচয়। মোবাইলফোনে খবর পেয়ে ফতেপুর গ্রামের হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ শনাক্ত করেন। রাসেল ছিলো দু ভাইয়ের মধ্যে বড়। হাসান ছোট। আনুমানিক ৮ বছর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বড় বাড়িয়া গ্রামের দুলাল আলীর মেয়ে নাজমা খাতুনের সাথে রাসেল বিয়ে করে। তার রয়েছে ৬ বছরের ছেলে স্বাধীন। আর মেয়ে মিমের বয়স মাত্র ৬ মাস।

পুলিশ বলেছে, রাসেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করা হয়েছে। কেন খুন করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। যেহেতু সে ছিলো অন্ধকার জগতের একজন, সেহেতু তার সাথে অন্ধকার জগতেরই কোনো পক্ষের বিরোধের কারণে খুন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ফতেপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি রাসেল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, তাকে প্রকাশে দেখা মিলতো না। দীর্ঘদিন ধরেই চরমপন্থিদলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। অনেকেরই নিকটেই চাঁদাবাজি করেছে। অবশেষে তার পতন ঘটেছে।