স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে আওয়ামী লীগকে আরেকবার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নতুন ও আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আর এ জন্য বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। জনগণের উদ্দেশে জয় আরো বলেন, আপনাদের দেখতে হবে কী সুযোগ এবং কী ভয় সামনে আছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দে রূপকল্প ২০২১, গত পাঁচ বছরের অর্জন, আগামী পাঁচ বছরের অঙ্গীকার শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সুচিন্তা ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় সফলদের সাথে মতবিনিময় করেন। বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। অনুষ্ঠানে জয়ের খালাতো ভাই ও শেখ রেহানার ছেলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ববী উপস্থিত ছিলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরে দেশে মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, ভেবে দেখুন, আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় আছি। বাংলাদেশে বর্তমান সময়টা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনেই নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অভিহিত করে জয় বলেন, এ নির্বাচনের ওপরই নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যত কী হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা রাইজিং স্টার। সমগ্র পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে এমন অবস্থায় পৌঁছে দিতে কাজ করেছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের কারণে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে জয় বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ ছিলো ফেইলর স্টেট। আর এখন বলা হয় বাংলাদেশ হচ্ছে নেক্সট ইলেভেন। আর এটা হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরে। জয় বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অনেক সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু তারা কখনও বলে না তারা ভবিষ্যতে কী করবে? তারা ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনা দেয় না। তারা বলে না, অর্থনীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ব্যাপারে তারা কী করবে? কারণ দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীরা তাদের সাথেই আছে। তারা রাজাকারদের নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা কীভাবে বলবে যে, তারা জঙ্গিবাদ দমন করবে? তিনি বলেন, আমাদের বিরোধী দলের পরিবর্তন হয়নি। তাদের চেহারা এক, নেতৃত্ব এক, পলিসিও একই রয়ে গেছে। এ সময় জয় বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কাজ না করে অপপ্রচার দিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রচেষ্টা মোকাবেলা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার ক্ষমতায় না আসলে দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা শেষ হয়ে যাবে। এই যে আজকের বিদ্যুত তা দু বছরে শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাড়বে উল্লেখ করে জয় বলেন, সন্ত্রাসীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিএনপি আসলেই আবার তারা চলে আসবে। এজন্য দেশের মানুষকে এখনই সচেতন হতে হবে। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের দেখতে হবে কী সুযোগ আছে সামনে। শুধু তাই নয়, কী ভয় আছে সামনে সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। অপপ্রচার চালিয়ে তারা ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জয় বলেন, এ অপপ্রচারের মোকাবেলা আমাদের সবাইকে করতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জয় বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে চায়। গত পাঁচ বছরে দেশের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও দ্বিগুণ করা হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই এটা পারবে উল্লেখ করে জয় আরো বলেন, আমাদের জিডিপি বাড়াতে হবে। গত পাঁচ বছরে জিডিপি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। এটা আগামী পাঁচ বছরে বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। জয় বলেন, থ্রিজি আনা আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে ফোরজি আনা হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ২০০৬ সালের আগে দেশ পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান হতে যাচ্ছিলো। সে সময় আওয়ামী লীগের ওপর রাজনৈতিকভাবে ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। ৩০ মিনিটে ৫০০ জায়গায় হামলা হয়েছে। এতে বুঝা যায়, সে সময় মানুষ কতোটা আতঙ্কে ছিলো। কিন্তু এখন দেশে সেই অবস্থা আর নেই। তবে যতোই কাজ করা হোক না কেন অনেকে সেটা ভালোভাবে নেন না। আমাদের মারাত্মক ভয় অপপ্রচার। মাঠে বাজারে যেটা হয়। আমাদের একজন রাষ্ট্রপ্রধান বলেছিলেন অনেকে কাজ করে ভোট পায় না। এর কারণ প্রচার। ৭৫-এর পর থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা থেকে শুরু করে অপপ্রচার শুরু হয়। এটা এখনো চলছে। সবাই দু নেত্রীর কথা বলেন। আপনারা দু’জনের আমলের মধ্যে তুলনা করেন। জয় প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের উন্নয়ন বা বিপ্লব কেন বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গণতন্ত্র ফিরে আসার পরও তা হলো কেন? কারণ স্বাধীনতা বিরোধীরা দুই বার ক্ষমতায় এসেছে। তারা দেশের উন্নয়নের কথা না ভেবে নিজেদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করেছে।
জয় বলেন, দুঃখজনকভাবে একটা রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা জঙ্গিবাদ ও রাজাকারদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যার জন্য আমরা পিছিয়ে পড়ছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রং লিডারশিপ ছিলো। তারা স্বাধীনতা ও ভাষা নিয়ে এসেছেন। দেশের অগ্রগতি থামাতে শুধু আমার নানাকে নয়, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
ক্রিকেট দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পতাকা সগৌরবে ওড়ানোর জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাকিব আল হাসানসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ধন্যবাদ জানান জয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা সফল এবং ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের সাথে জয়কে মুখোমুখি করতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন। এছাড়া সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জয়ের বক্তব্যের পর সবার জন্য আলোচনা উন্মুক্ত করা হয়।