স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় তিন দশক আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন মাগুরা পৌরসভার ঘোড়ামারাগ্রামের কৃষক আমজাদ মোল্লা (৬৫)। শত ওষুধে কাজ হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্তজার্মানির তৈরি একটি হোমিও ওষুধ খান। তাতে কাজ হয়। ক্রমেই জটিল রোগ থেকেমুক্তি লাভ করেন আমজাদ। ওই ঘটনায় জার্মানির প্রতি তার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতাজন্মে।
আমজাদ মোল্লা জানান, জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে ২০০৬সালে প্রায় ৩৫০ গজ লম্বা জার্মানির একটি পতাকা তৈরি করেন। ওই বছর বিশ্বকাপচলাকালে ওই পতাকাটি প্রদর্শনের জন্য মাগুরা শহরে নিয়ে যান। মানুষ তখনএটিকে পাগলামি বলেই ধরে নিয়েছিলো। তবুও জার্মানির প্রতি তার ভালোবাসাএতটুকু কমেনি,বরং বেড়েছে। ওই বিশ্বকাপের পর পতাকা বড় করার কাজে মনোযোগী হনআমজাদ।২০১০ সালের বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় সাত হাজার গজলম্বা করেন আমজাদ। ওই বছর গ্রামের লোকজন নিয়ে পতাকাটি মাগুরা শহরের নোমানীময়দানে এসে প্রদর্শন করেন। চলতি বিশ্বকাপের আগে পতাকাটি প্রায় তিনকিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা করেন।
আমজাদ জানান, ধীর ধীরে পতাকা তৈরিকাজটি করেছেন তিনি। তিনজন দর্জিকে মোট ৪০ হাজার টাকা মজুরি দিয়েছেন। পতাকাতৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এক যুগ ধরে তিনি অল্পঅল্প করে ওই পতাকা তৈরি করেছেন। অভাবী সংসারে এজন্য তাকে নানা গঞ্জনাওসহ্য করতে হয়েছে।
আমজাদ মোল্লার ভালোবাসা বৃথা যায়নি। গতকাল শনিবারদুপুরে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ড.ফারদিনান্দ ফন মাগুরার রামনগর এলাকায় জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিতটেকসই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দেখতে আসেন। ওই প্রকল্প এলাকাপরিদর্শন শেষে বেলা ২টার দিকে তিনি মাগুরা স্টেডিয়ামে যান। সেখানে আমজাদহোসেনের তৈরি করা প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা পতাকাটি প্রদর্শন করা হয়।
পতাকাটিদেখে মুগ্ধ ও আবেগাপ্লুত হন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ড. ফরদিনান্দ ফন ভায়া।জার্মানির প্রতি আমজাদের ভালোবাসার সম্মাননা হিসেবে তার হাতে ‘জার্মানফুটবল দলের ফ্যান ক্লাবের আজীবন সদস্যের’কাগজ তুলে দেন। এ সময় তাকে একটিফুটবল ও জার্মানির জার্সিও উপহার হিসেবে দেন রাষ্ট্রদূত। অন্যদিকে আমজাদমোল্লা জার্মান রাষ্ট্রদূতের হাতে কুলা,বাঁশি,ঢালাসহ কিছু উপহার সামগ্রীতুলে দেন। এ সময় মাগুরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জার্মান উন্নয়ন ব্যাংকবাংলাদেশের সেক্টর বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত পরেঘোড়ামারা গ্রামে আমজাদ মোল্লার বাড়িতেও যান।
জার্মানির প্রতিআমজাদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি অভিভূত।ভালোবেসে জার্মানির এতো বড় পতাকা এর আগে কেউ তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই।বাংলাদেশের একজন কৃষক ওই পতাকা তৈরি করায় তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।