দামুড়হুদায় খেলার মাঠ থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার : ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন

মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিহতের পরিবার ও পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদা উপজেলা শহরের বাসস্ট্যারে অদূরে গুলশানপাড়ার খেলার মাঠ (পতিত জমি) থেকে রানা (২২) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংবাদ পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে যান দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীব। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) নওশের আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (প্রবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠান। বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় পাড়া (বসুতি পাড়া) কবরস্থানে নিহতের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহত যুবকের পরিবারের লোকজনের দাবি রানাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফাঁকা মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, নেশা জাতীয় দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে অথবা পান করে তার মৃত্যু হতে পারে।  এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সে উপজেলা শহরের বনানীপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা শহরের বনানীপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে (কাঠ মিস্ত্রি) এক সন্তানের জনক রানা মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বাসস্ট্যান্ডের ছানোয়ারের চায়ের দোকানের সামনে কেরাম বোর্ড খেলছিলো। ওই সময় তার পিতা আব্দুল মজিদ তাকে দেখে বাড়ি যেতে বলে। রানা তার পিতাকে বলে তুমি যাও আমি পরে আসছি। এরপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। রানা বাড়িতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন ওই রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস মেলাতে পারেনি। গতকাল বুধবার সকালেও বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসা করেছে রানাকে দেখেছে কি-না। কিন্ত কেউই তার খোঁজ বলতে পারেনি। দুপুর ১টার দিকে দশমীপাড়ার রাফেজা নামের এক গৃহবধু গুলশানপাড়ার (পতিত জমি) খেলার মাঠে গরু বাঁধতে এসে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। সে রানাকে চিনতে পেরে তার পরিবারে খবর দেয়। সংবাদ পাওয়া মাত্রই দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীব ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং দুপুর আড়াইটার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠান। সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) নওশের আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (প্রবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় পাড়া (বসুতি পাড়া) কবরস্থানে নিহতের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নিহত যুবকের পরিবারের লোকজনের দাবি রানাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফাঁকা মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ তার বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীব বলেন, যেহেতু তার চোখ মুখ দিয়ে ব্লাড ঝরেছে এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায় সে ইদানিং নেশাও করতো সে কারণেই নেশাজাতীয় দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে অথবা পান করে তার মৃত্যু হতে পারে বলে আমার ধারণা। এদিকে রানার এ অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহত রানার পরিবার ও স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে এলাকার বাতাস ক্ষনিকের জন্য ভারি হয়ে ওঠে। রানার মৃত্যু সংবাদের পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলো নিহত রানার স্ত্রী শুকতারা খাতুন, মা রহিলা বেগম, পিতা আব্দুল মজিদ ও বড় ভাই মিলন। ১১ মাস বয়সী একমাত্র মেয়ে সেতু অপোলক দৃষ্টিতে চেয়েছিলো সকলের দিকে। কি যেন হারিয়ে খুজছিলো ওই শিশু কন্যাটিও।

নিহত রানার প্রকৃত পরিচয়: নিহত রানা চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ভিমরুল্লা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। মাত্র দু মাস বয়সে রানার মা মারা গেলে চাচি রহিলা বেগম ও চাচা আব্দুল মজিদ রানাকে দামুড়হুদায় নিয়ে চলে আসেন এবং তাদের পরিচয়ে রানাকে বড় করে তোলেন। গতকাল বুধবার রানা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত রানা মজিদের আপন ছেলে বলেই সকলে জানতেন।