প্রায় এগারো বছর পর রূপ বদল করে আরও ভয়াবহ রূপে হাজির হয়েছে একটিভাইরাস। পূর্ববর্তী অবস্থায় এ ভাইরাসের নাম ছিলো সার্স (সিভিয়ার রেসপিরেটরিসিনড্রোম)। নবশক্তি সঞ্চয় করে সেই ‘করোনা ভাইরাস’দু বছর ধরেক্রমশ আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। মধ্যপ্রাচ্যেই সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব শুরুহওয়ায় সার্সের এ নয়া সংস্করণের পোশাকি নাম দেয়া হয়েছে ‘মিডল-ইস্টরেসপিরেটরি সিনড্রোম’বা মার্স। ২০০৩ সালে দুনিয়া জুড়ে ত্রাস ছড়িয়েছিলোসার্স। ‘করোনা’র হামলায় সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর আচমকা প্রবল শ্বাসকষ্টেপরিণত হয়ে প্রাণ গিয়েছিলো অন্তত ৮শ মানুষের। এবার সেই একই জীবাণুর অন্যএকটি রূপভেদ প্রকট হওয়ায় উদ্বিগ্ন চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা। ২০১২ সালের এপ্রিলেমধ্যপ্রাচ্যে এ মার্স ভাইরাস-সৃষ্ট জটিল নিউমোনিয়া শনাক্তের পর এখন অবধিদেখা গেছে,জীবাণুটির সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ।ভয়টাএখানেই। যেহেতু ভাইরাসটির প্রতিকার হিসেবে কোনো কার্যকর চিকিত্সা এখনওআবিষ্কার হয়নি,সেহেতু জীবাণুর সংক্রমণ হতে বাঁচতে প্রতিরোধই একমাত্রউপায়। মাত্র দু বছরের মধ্যে ফ্রান্স,জার্মানি,ইতালি,যুক্তরাজ্য,জর্ডান,কাতার,সৌদি আরব,তিউনিসিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ ভাইরাসেরঅস্তিত্ব মিলেছে। কানাডিয়ান একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে,বাংলাদেশসহ আটটি দেশ ও ১২টি শহর এ জীবাণুটির সবচেয়ে বড় সংক্রমণের ক্ষেত্রহয়ে উঠতে পারে। সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ শহরসমূহ হলো- ঢাকা,মুম্বাই,করাচি,কায়রো,কুয়েত সিটি,বাহরাইন,লন্ডন,ইস্তাম্বুল,বৈরুত,ম্যানিলা ওজাকার্তা। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো,গত সপ্তায় বাংলাদেশেও মিলেছেভাইরাসটির অস্তিত্ব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যেরবাইরে যারা মার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন,তাদের সকলেই সংক্রমণেরপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বিবিধ কারণে আমাদেরযোগাযোগ ও যাতায়াত নিবিড়। মধ্যপ্রাচ্যে গমনেচ্ছু পর্যটকদের মধ্যে যারাডায়বেটিস, ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন, মার্স ভাইরাসেরকারণে তাদের অসুস্থতার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরাজানিয়েছেন, ভোল বদলে নয়া এ করোনা ভাইরাস শ্বাসতন্ত্র দিয়ে তার হামলাশুরু করলেও,পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে (সিস্টেমিক) ছড়িয়ে পড়ে। এপিথেলিয়ামআবরণের কোষের প্রতি আক্রমণের প্রবণতার মধ্য দিয়ে ‘করোনা’হানা দেয়কিডনিতেও। সঠিক সময়ে চিকিত্সা শুরু না হলে ‘রেনাল ফেইলিওর’প্রায় অবধারিত।
এ কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত তেমন ‘ভয়াবহ’না হওয়াসত্ত্বেও চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। কেননা,জীবাণুটি মধ্যপ্রাচ্য হতে দুনিয়ারসর্বত্র বিস্তার লাভ করলে মহামারির (প্যানডেমিক) আশঙ্কা দেখা দেবে।মার্সের প্রধান উত্স হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে উট,গরু,ছাগল,ভেড়া,মহিষ,শূকর,বাদুড়সহ বিভিন্ন প্রাণী। নিয়মিত সাবান দিয়ে ন্যূনতম ৩০ সেকেন্ডধরে হাত ধৌত করা, হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় নাক ও মুখে টিস্যু বা রুমালব্যবহার করা এবং তা যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিন বা ময়লার ঝুড়িতেফেলা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক কিংবা মুখ স্পর্শ করা হতে বিরত থাকা, ঘরেরযে সকল জিনিসপত্র বেশি ধরাধরি করা হয়, সে সমস্ত নিয়মিতপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এরূপ বিবিধ সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারেজনসাধারণকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতন করা আবশ্যক। বাংলাদেশ সরকারেররোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ হতেযদিও বলা হচ্ছে যে,মার্স জীবাণু আক্রান্তের ত্বরিত রোগ নির্ণয় ওচিকিত্সার জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তারপরও প্রতিরোধের যাবতীয়উপায় নিয়ে জনসচেনতার ব্যাপারে অবহেলার সুযোগ নেই।