১৫ বছরেও অসম্পূর্ণ মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্র

৫ কোটি টাকার জন্য শেষ হচ্ছে না নির্মাণকাজ

 

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের শপথ স্থান মেহেরপুর মুজিবনগরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণাধীন মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্রের নির্মাণকাজ ১৫ বছরেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসে নির্মীয়মাণ এ স্মৃতিকেন্দ্রের কাজ মাত্র ৫ কোটি টাকার অভাবে আটকে আছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট দফতর।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্পটি হাতে নেয়। সে অনুযায়ী ঐতিহাসিক আম্রকাননকে ঘিরে ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই সময় ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও নির্মাণের দায়িত্বে ছিলো গণপূর্ত অধিদফতর। তবে নকশা ও পরিকল্পনাসহ যাবতীয় কাজের তদারকি ছিলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতে। ২০০১ সালে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি পুরো কাজ। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রকল্পটির ব্যয় ৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকায় উন্নীত করে। তারপরও প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ থাকায় অর্থের অভাবকেই দায়ী করেছে গণপূর্ত বিভাগের স্থানীয় দফতর।

Untitled-1 copy

মেহেরপুর গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ জানান, বছরখানেক আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্মৃতিকেন্দ্রের কাজ পরিদর্শন করেন। কেন্দ্রটির নির্মাণ দ্রুত শেষ করা, দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ২০টি পাবলিক টয়লেট ও টিউবওয়েল স্থাপন এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিসংবলিত একটি ফটক নির্মাণের জন্য তারা বাজেট ও পরিকল্পনা প্রেরণের নির্দেশ দেন। তাদের নির্দেশনা মতো ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে পরিকল্পনা পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তাই বাকি নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দু-এক মাসের জন্য প্রকল্পটির কাজ শেষ করা যাবে।

গণপূর্ত অধিদফতরসূত্রে জানা গেছে, মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্রে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের আবক্ষ মূর্তিকক্ষ, মিলনায়তন, প্রশাসনিক ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারীদের ম্যুরাল। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংবলিত আরো কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবন ও মিলনায়তনের কাজ কয়েক বছর আগে শেষ হলেও বিদ্যুত সংযোগ ও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে দর্শনার্থীদের জন্য তা খুলে দেয়া হয়নি।

স্মৃতিকেন্দ্রে বাংলাদেশের যে মানচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ঘটনার নিদর্শন রয়েছে। মানচিত্রটিকে যুদ্ধকালীন সময়ের ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় তাও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া যাচ্ছে না। মানচিত্রের বাইরে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ম্যুরাল, ২৫ মার্চের কালরাত্রির চিত্র, পাকবাহিনীর নারী নির্যাতনের চিত্র, ১২ আনসার কর্তৃক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান ও সেক্টর বণ্টনসহ অরোরা, নিয়াজি এবং একে খন্দকারের উপস্থিতিতে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য সংবলিত ভাষ্কর্য।

এদিকে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এখনো শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেই মুজিবনগরে নির্মাণাধীন বিভিন্ন স্থাপনার নকশা পরিবর্তন হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর বিএনপি সরকার এ প্রকল্পে গুরুত্ব না দেয়ায় সে সময় কিছু কিছু নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলেও এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এ সরকারও মুজিবনগরের বিষয়ে এলাকার মানুষের দাবি পূরণ করতে পারেনি।

শুধু মুজিবনগর স্মৃতি কেন্দ্র নয় পর্যটন মোটেল, শপিং মলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবহার হচ্ছে না। গোটা কমপ্লেক্সটিকে পুর্ণাঙ্গরুপে চালু করা গেলে দর্শনার্থীদের কাছে যেমনি হবে আরও আকর্ষণীয় তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। তাই দ্রুততম সময়ে কমপ্লেক্সের নির্মানকাজ সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গরুপে চালুর দাবি জানালেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকতার হোসেন।