চুয়াডাঙ্গায় পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট আর ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের যাত্রীবাহী যান বন্ধ অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট আর ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির সব ধরনের যাত্রীবহন করা যান বন্ধের মধ্যে পড়ে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের অন্ত নেই। নারী-শিশুসহ সকল প্রকারের যাত্রী সাধারণকে সড়কে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে দেখা গেছে।
করিমন-নসিমন চললেও চুয়াডাঙ্গার প্রবেশমুখে বাধা দেয়ায় যাত্রী দুর্ভোগের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যায়। কবে নাগাদ এ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে, কবে তুলবে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির বন্ধের ঘোষণা তা গতরাত পর্যন্ত ছিলো অনিশ্চয়তার মধ্যে। তবে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বলেছেন, বাস ভাঙচুর মামলার দুজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ইজিবাইক মালিক শ্রমিক বহুমুখি সমিতির সাথে বাস শ্রমিকদের বিরোধ তুঙ্গে। পৌর এলাকার বাইরে ইজিবাইক চালাতে না দেয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিলো। গত মঙ্গলবার ইজিবাইক ভাঙচুরের পর মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের আহ্বানে মেহেরপুর সড়কের বঙ্গজের নিকট সমবেত হয়ে বাস ভাঙচুর শুরু করে। দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ, পরিবহন শ্রমিক ও ইজিবাইবাইক মালিক শ্রমিকদের ত্রিমুখি সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতি তাদের ইজিবাইক পৌরসভার বাইরেও নির্বিঘ্নে চলাচলেরর দাবি জানিয়ে সকল ধরনের যাত্রীবহন করা যানবাহন বুধবার সকাল থেকে চলাচল বন্ধের ডাক দেয়। এদিন সকালে বাস চলাচল শুরু করলে চুয়াডাঙ্গা-জীবনগর সড়কের উজিরপুর ও কেদারগঞ্জে বাস ভাঙচুর করা হয়। এর প্রতিবাদসহ তিন দফা দাবিতে আন্তঃজেলা বাস-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। গত বুধবার দূরপাল্লার কোচগুলোও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে। অবশ্য গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা রুটের কোচগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে বলে শ্রমিক ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন। যদিও পুলিশের তরফে গতকালও বলা হয়েছে, পরিবহন শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট স্থগিত করেছে। এর সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে গতপরশু রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাস ভাঙচুর মামলায় দৌলাতদিয়াড় মাঝেরপাড়ার মকবুল হকের ছেলে মনজুরুল ও একই গ্রামের রবিউলের ছেলে সাজুকেগ্রেফতার করেছে। গতকাল এদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় পরিবহন ধর্মঘট ও ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের বিরোধের মূলে রয়েছে উভয়পক্ষের স্বার্থ। ইজিবাইক চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বাইরে চালাতে দেবেন পরিবহন শ্রমিকরা। কারণ তাদের যাত্রী হ্রাস পায়। আয় কম হয়। অপরদিকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের দাবি টাকা দিয়ে ইজিবাইক কিনে চালাতে গেলে ওরা বাধা দেবে কেনো। পৌরসভার বাইরে চালকেরা বাড়ি খাবার খেতে গেলেও মারধর করা হয়। আবার কেউ কেউ কুড়ি টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এসব অনিয়ম নীরবে কতোদিন সহ্য করা হবে? এ প্রশ্ন তুলেই মূলত তারা সম্প্রতি আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলন তীব্রতর হয়ে যাত্রী সাধারণের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিহন শ্রমিকদের দাবি সড়ক থেকে সকল প্রকারের অবৈধ যান উচ্ছেদ করতে হবে। বাস ভাঙচুর মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে হবে। সড়কে পরিবহন চলাচলে পরিবহনসহ শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে। অপরদিকে ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির দাবি, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা সড়কের মুন্সিগঞ্জ, মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর, ঝিনাইদহ সড়কের ডিঙ্গেদহ ও জীবননগর সড়কের দামুড়হুদা পর্যন্ত ইজিবাইক নির্বিঘ্নে চলাচল করতে দিতে হবে। তা না হলে বাসগুলো শহরের প্রবেশদ্বারের বাইরে থামিয়ে যাত্রী নামাতে হবে। এসব দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফে গতপরশু উদ্যোগ নেয়া হলেও পরিবহন শ্রমিকদের সাড়া না পাওয়ার কারণে তা ভেস্তে যায়। ফলে ধর্মঘট এবং যাত্রী বহন করা যান বন্ধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা গতকাল পর্যন্ত ছিলো অনিশ্চিয়তার মধ্যে।