দৌলতপুর প্রতিনিধি: চিকিৎসক সঙ্কটে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপজেলার ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ওষধ সঙ্কট, রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ প্রয়োজনীয় ৩৪ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে নামে মাত্র চলছে দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। ফলে প্রতিদিন শশ রোগী চিকিৎসা নিতে এসে সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. নাজিম উদ্দিন জানান, হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের মাতৃসেবা ও সিজার, ইনডোর, আউটডোরের দিবারাত্রি দায়িত্বপালন মাত্র ৩ জন ডাক্তার দিয়ে অসম্ভব।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ)সহ ২০ জন এবং উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪ জনসহ সর্বমোট ৩৪ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। বর্তমানে টিএইচএসহ মাত্র ৩ জন চিকিৎসক এখানে কর্মরত আছেন। আর ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চিকিৎসক শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে, এ উপজেলার প্রায় ৭ লক্ষাধিক মানুষ সরকারের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরি বিভাগে সামান্য কাটাছেঁড়া রোগীর সেবা দেয়া ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাগ্য ভালো হলে হয়তো কোনো চিকিৎসকের দর্শন মিলে। কেননা ডাক্তার সঙ্কটের কারণে বহির্বিভাগে সকাল ৯টার পরিবর্তে বেলা ১২টার আগে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়না। তাছাড়া সামান্য জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের অভাবে নার্স ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টরা রোগীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি প্রায় একযুগ ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ইসিজি মেশিনটি ও ৫/৬ বছর ধরে নষ্ট। সংরক্ষণ ও মেরামতের নামে অর্থ ব্যয় হলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। আল্ট্রাসনো মেশিনটি যেভাবে এখানে এসেছিলো এখনও সেরকম প্যাকেট করা রয়েছে। অক্সিজেন না থাকায় মুমূর্ষু রোগীরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে রোগীরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগীদের খাবার পরিবেশনে লক্ষ্য করা গেছে শুভঙ্করের ফাঁকি। রোগীদের প্রতিদিন একবেলা মাছ ও একবেলা মাংশ দেয়ার শর্ত থাকলেও তা দেয়া হচ্ছেনা। গরু বা খাশির মাংশের বদলে ব্রয়লার মুরগির মাংশ এবং রুই মাছের বদলে পাঙাস বা সিলভার কার্প মাছ দেয়া হচ্ছে। হাসপতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, আমরা গরিব মানুষ, যা দেয়ইচ্ছা না থাকলেও তাই খাচ্ছি।
একাধিক ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, সরকারিভাবে হাসপাতালে ৩৬ ধরনের ওষুধের সরবরাহ থাকলেও রোগীদের প্যারাসিটামল, এন্টাসিড ও মেট্রোনিডাজলসহ মাত্র ১০/১২ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও দামিওষুধগুলো রোগীরা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আকুল উদ্দীন বলেন, সবেমাত্র আমি এখানে যোগদান করেছি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দৌলতপুর হাসপাতালের অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসক নেই। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত সুরাহা হয়ে যাবে।