দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য

 

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা জেলা ভাসছে মাদকে। ধ্বংস হচ্ছে জীবন, পরিবার, সমাজ, জাতীয় তথা দেশ। এ সমাজকে রক্ষা করতে এখনই মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া উচিত আইনি কঠোর ব্যবস্থা। হয়তো এলেও আসতে পারে সুফল। অন্যথায় মাদকের করাল গ্রাসে চরম অবক্ষয়ের পথে ধাবিত হবে সমাজ। মরণব্যাধি ক্যানসারের মতো মাদক ছড়িয়ে যাবে গোটা সমাজে। মাদককে রুখতে প্রশাসনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। উচ্ছেদ করতে হবে মাদকের আকড়া। পুলিশে ধরে সোপর্দ করতে হবে মাদককারবারীদের। মাদককারবারীর উৎসাহদানকারীদের আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে হাজির করতে হবে। মাদক প্রতিরোধে শুরুতেই এগিয়ে আসতে হবে সীমান্তরক্ষী বিজিবিদের। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে মাদকদ্রব্য জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে। দামুড়হুদার মুন্সিপুর, ফুলবাড়িয়া, ঝাঁঝাডাঙ্গা, বাড়াদী-কামারপাড়া, ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, সুলতানপুর, দর্শনা জয়নগরও নিমতলাসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে মাদকব্যবসায়ীরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে বহন করে আনছে মারণনেশা হেরোইন, ফেনসিডিল, গাজা ও মদ। নেশার টাকা জোগাতে মরিয়া মাদকাসক্তদের ব্যবহার করছে মাদককারবারীরা। মূল হোতারা অল্প টাকায় জোন হাজিরায় ভারত থেকে মাদকদ্রব্য এনে থাকে। বিজিবি-পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগের সদস্যদের হাতে ধরা পড়লে মাদকাসক্তরাই ধরা পড়ছে। যে কারণে থেমে থাকেনা মাদকের কারবার। সীমান্ত পথে প্রচুর পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাচার করে এনে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। চুয়াডাঙ্গায় মাদকের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম ও মহল্লা। নিয়মিত হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজার মোকাম বসছে বহুল আলোচিত আকন্দবাড়িয়া, রাঙ্গিয়ারপোতা, সিংনগর ও দর্শনা হল্টস্টেশনে। এ মোকাম থেকেই ছড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। মাদককারবারীদের সহযোগিতা ও অর্থবাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগ। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে মাদককারবারীদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা আদায়ে মেতে থাকতে দেখা যায় দর্শনা হল্টস্টেশন ও আকন্দবাড়িয়ার আলোচিত দু যুবককে।

সূত্র বলেছে, ভারতে ফেনসিডিল বাজারে প্রতি বোতল ফেনসিডিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে কিনে আনা হয়ে থাকে। সীমান্ত পেরিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছুনো পর্যন্ত প্রতি বোতল ফেনসিডিলের সর্বসাকুল্যে খরচ হয় ২৫০ টাকা। দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় এক বোতল ফেনসিডিলের খুচরা মূল্য প্রায় ৪০০ টাকা। অতিরিক্ত লাভজনক এ কারবার করে অনেকেই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। যার কারণে দিনদিন মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মাদককারবারী। প্রচুর লাভজনক কারবার হওয়ায় প্রতিদিন বিজিবি পুলিশের হাতে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হলেও থামেনা মাদককারবার। অনেকে ঘরে বসেই হরহামেশায় এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ফেরি করেও করছে ফেনসিডিল, হেরোইনসহ মাদকদ্রব্য বিক্রি। এ ছাড়া আকন্দবাড়িয়া ও দর্শনা হল্টস্টেশনসহ বিভিন্ন স্পট থেকে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ ও গাঁজা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাস, ট্রাক, ট্রেনযোগে পাচার হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল বিকিকিনি হলেও যেনো দেখার কেউ নেই। মাদককারবারীদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে ট্রেন ব্যবস্থা। এলাকাবাসী দাবি তুলে বলেছে, মাদকদ্রব্যসহ পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যদের হাতে যারা ধরা পড়ছে তারা মাদককারবারীচক্রের জোন হাজিরা শ্রমিক। ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় মাদককারবারীর মূল হোতারা। যে কারণে থেমে থাকেনা এ কারবার। এলাকায় মাদককারবারীচক্রের হোতারা চিহ্নিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়না কোনো আইনি ব্যবস্থা। তবে এ হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে কিছুটা হলেও সুফল বয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে মাদককারবারীচক্রের সদস্যরা অনেকটাই অপশক্তিশালী ও ভয়ংকর প্রকৃতির। তাই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না সাধারণ মানুষ। চুয়াডাঙ্গাকে মাদকমুক্ত করতে আবারো পুলিশ সুপারের কাছে দাবি তুলেছে সচেতনমহল।