প্রেমের টানে কাঁটাতার পাড়ি : বিয়ে :অতঃপর কারাগারে

 

স্টাফ রিপোর্টার: এপারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রাম, ওপারে ভারতেরপশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মুরুটিয়া থানার শিকারপুর গ্রাম। মাঝখানেহাঁটুপানির মাথাভাঙ্গা নদী।ধর্মদহের আমজাদ আলী আর শিকারপুরের পম্পা মণ্ডলের পরিচয় হয় চার বছরআগে। এরপর মাথাভাঙ্গার দু পাড়ে মাঝে মাঝে দেখা। মোবাইলফোনে যোগাযোগ ছিলোনিয়মিত।এভাবেই কাটে চারটি বছর। এরপর গত ১৪ মে পম্পা নদী পার হয়েআমজাদের সাথে দেখা করতে আসেন। পরে আমজাদ পম্পাকে বাড়িতে নিয়ে যান। বিয়েকরে শুরু করেন সংসার।গত রোববার দুপুরে স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের সহায়তায় পুলিশ পম্পাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁকেঅবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রেমিক আমজাদ আলী জানান, বছর চারেক আগে তিনি নদী পার হয়ে শিকারপুরগ্রামে দুর্গাপূজা দেখতে যান। সেখানে অনুপ মণ্ডলের সাথে তার পরিচয় হয়।পরিচয় হয় অনুপের একমাত্র ছোট বোন পম্পা মণ্ডলের সঙ্গেও। পম্পা স্থানীয়করিমপুর পান্না দেবী কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। একপর্যায়ে দুজনেরমধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমজাদ পম্পাকে একটি বাংলাদেশি মোবাইলফোনের সিম কিনে দেন। সব সময় দেখা না হলেও মোবাইলফোনে তাঁদের সম্পর্ক দিনদিন গভীর হয়।
গত ১৪ মে পম্পা কাঁটাতার পেরিয়ে আমজাদের কাছে ছুটে আসেন।তিনি তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান। দুদিন পর মেহেরপুর শহরে বাসস্ট্যান্ডএলাকায় একটি কাজি অফিসে পম্পার নাম (আমেনা খাতুন) পরিবর্তন করে বিয়ে করেনআমজাদ। এরপর তাঁরা আমজাদের বাড়ি ফিরে আসেন।এদিকে পম্পা বাড়ি ছেড়েচলে আসার পরপরই তাঁর বড় ভাই অনুপ মণ্ডল স্থানীয় মুরুটিয়া থানায় আমজাদেরবিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। পাশাপাশি তিনি কলকাতায় সংলাপ নামে একটিমানবাধিকার সংগঠনকে বিষয়টি জানান। পরে সংলাপ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি বাংলাদেশজাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিকে জানিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারে সহায়তা কামনাকরে। সমিতির কুষ্টিয়া অফিসের কর্মীদের সহায়তায় পুলিশ অনুপ্রবেশেরঅভিযোগে পম্পাকে গতকাল আমজাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমেকুষ্টিয়া কারাগারে পাঠায়।

জানতে চাইলে আমজাদ আলী বলেন, ‘ভাই আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসি যা বলে বোঝাতে পারব না। এটা বিধাতার দান।আমি তাকে বিয়ে করেছি। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও হয়েছে। কোনো সিস্টেমথাকলে আমি কারাগারে গিয়ে ওঁর সাথে থাকতে চাই। যেকোনো মূল্যে আমি পম্পাকেফেরত চাই। এর জন্য আমি আইনি লড়াই করতে প্রস্তুত।’ যোগাযোগ করা হলেপম্পার বাবা অসিত মণ্ডল মোবাইলফোনে বলেন, তিনি যেকোনো উপায়েএকমাত্র মেয়েকে ফেরত চান। মেয়ে ভুল করেছে। প্রেমের বিষয়টি তিনি জানতেননা। তিনি আরও জানান, আগামী আগস্টে পম্পার প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা।এর আগেই মেয়েকে ফেরতের আকুতি জানান তিনি।পম্পার বরাত দিয়ে মহিলাআইনজীবী সমিতির কুষ্টিয়ার প্রকল্প কর্মকর্তা আইনজীবী কামরুন্নাহার জানান, ‘মেয়েটি ছেলেটিকে অসম্ভব ভালোবাসে। সে এ দেশেই থাকতে চায়।তবে সে (পম্পা) এক পর্যায়ে জানায়, মোবাইলফোনই তার সর্বনাশ করেছে। এখনসেই ভুল শোধরাবার কোনো উপায় নেই বলে জানায়। যা হবার হয়ে গেছে। সে সংসারকরতে চায়।’ কামরুন্নাহার বলেন, আমজাদকে ভণ্ড মনে হয়েছে। পম্পাকে আইনিসহায়াতা দেয়া হচ্ছে। তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগার থেকে বের করে ফেরতপাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নেরচেয়ারম্যান ও ধর্মদহ গ্রামের বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, আমজাদ এসএসসিপরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর আর লেখাপড়া করেনি। তাঁর পরিবারের অবস্থাওভালো না। ছেলেটি ডানপিটে স্বভাবের। তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারঅভিযোগ আছে।