মাথাভাঙ্গা মনিটর:ব্রাজিল একবার বিশ্বকাপের রঙে রঙিন হয়েছিলো ১৯৫০সালে। ফুটবল-পাগল দেশটিতে এবার আবার বিশ্বকাপের রঙ লেগেছে। ৬৪ বছরেআটলান্টিকে অনেক জল বয়েছে,বদলেছে অনেক কিছুই। তবে ব্রাজিলের কিছু ব্যাপারসেই আগের মতোই আছে।ব্রাজিল বিশ্বকাপ১৯৫০ আর ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪-এর মধ্যে বড় একটা মিল ম্যাচ দেখা নিয়ে সমর্থকদের চরমউদ্বিগ্নতা। সময় মতো স্টেডিয়াম প্রস্তুত করে তোলার ব্যর্থতা আর বাজেটের ঘাটতিই তাদেরএ দুশ্চিন্তার কারণ।
ব্রাজিলের ১২টিশহরে হতে যাওয়া এ বিশ্বকাপে কমপক্ষে ১ হাজার ২৩২ কোটি ডলার খরচ হবে। এর মধ্যে প্রায়এক-তৃতীয়াংশ খরচই আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরিতে হয়েছে।এবারের ১২টিস্টেডিয়ামের মধ্যে রিও দে জেনেইরোতে ফাইনালের ভেন্যু মারাকানাসহ সাও পাওলো আর ব্রাসিলিয়ারস্টেডিয়াম তিনটিতেই বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু ১২টি ভেন্যুর সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুত হয়েছেমাত্র দুটি।১৯৫০ বিশ্বকাপেমারাকানাসহ খেলা হয়েছিলো মাত্র ৬টি স্টেডিয়ামে। ‘১৯৫০: দ্য প্রাইস অব এ ওয়ার্ল্ড কাপ’ বইয়ের লেখক দিয়েগো উল্লেখ করেন, ১৯৫০-এর বিশ্বকাপের মোট বাজেটের ৯০ শতাংশই মারাকানাস্টেডিয়াম তৈরিতে খরচ হয়েছিলো। স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছিলো ২ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে।১৯৫০ সালেওকর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করতে কয়েক বছর দেরি করেছিলো এবং পরে দ্রুত কাজ শেষ করতে বাড়তি খরচকরতে হয়েছিল। সেই সময় আর এ সময়ের তুলনা করে সালগাদো বলেন, ৬৪ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তুআমরা সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি।১৯৫০ সালে শেষমুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাজ করতে হয়েছিলো বলে মারাকানা স্টেডিয়াম তৈরির খরচ বেড়ে গিয়েছিলেবলে উল্লেখ করেন সালগাদো।
সেবার ব্রাজিলবিশ্বকাপ জিততে পারেনি। কিন্তু তারপর রেকর্ড পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতে ফুটবল-পাগল দেশটিনিজেদের পরাশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ২০০৭ সালে ব্রাজিল ২০১৪ বিশ্বকাপ আয়োজনেরছাড়পত্র পাওয়ার পর তাই বিশ্বজোড়া সমথর্করা আনন্দে মেতেছিলো।ব্রাজিলের রাজনীতিকরাস্বপ্ন দেখিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশটির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগুলো গড়ে তোলারসুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হতে এক সপ্তাহরও কম সময় থাকলেও এখন পর্যন্তবেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি।‘ফুটেবল ন্যাশন:দ্য স্টোরি অব ব্রাজিল থ্রু সকার’ বইয়ের লেখক ডেভিড গোল্ডব্লাট বলেন,এখনকার মতো ১৯৫০সালেও বিশ্বকাপকে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের তুলে ধরার একটা সুযোগ হিসেবে দেখেছিল ব্রাজিল।দেশটি খুব দ্রুতই আধুনিকায়নের দিকে যাচ্ছিল এবং বৈশ্বিকভাবে তাদের উপস্থিতিটা আরো জোরদারকরতে চাচ্ছিলো। তখনও এখনকার মতোই টুর্নামেন্টের পর নির্বাচন ছিলো। আর রাজনীতিকরা এটাকেকাজে লাগাচ্ছিল।এবার প্রায়৩০ লাখ টিকেট বিক্রি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮ লাখের মতো মানুষ বিশ্বকাপদেখতে ব্রাজিল যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৯৫০ সালের সেই আয়োজনের চেয়ে একেবারেই ভিন্নএবং জাকজমকপূর্ণ একটি বিশ্বকাপই এবার দেখবে তারা।১৯৫০ বিশ্বকাপেরজন্য মাত্র দুটি স্টেডিয়ামই নতুন করে তৈরি করা হয়েছিলো। এটাকেই ফুটবল আর দেশের ভাবমূর্তিরজন্য দারুণ উন্নতি বলে ধরা হয়েছিল।মারাকানা এতোদেরি করে প্রস্তুত হয়েছিল যে দেয়ালের পলেস্তারাও ভালোভাবে শুকায়নি। ইংল্যান্ডের রেফারিআর্থার এলিস তার প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, ২১ বার তোপধ্বনির সময় দেয়াল থেকে পলেস্তারাখুলে পড়ে। অনাবৃত স্টিলের বিমে যুগোস্লাভের এক খেলোয়াড়ের মাথা কেটে যায়।এবারের বিশ্বকাপখেলছে ৩২টি দেশ, আর ১৯৫০-এর বিশ্বকাপে দল ছিল মাত্র ১৩টি। সেই তুলনায় আগ্রহটা তখন এরচেয়ে বেশি ছিল। তখনই ফুটবল ব্রাজিলে ধর্মজ্ঞান ছিলো। ২২টি ম্যাচের গড় দর্শক উপস্থিতিছিলো ৪৭ হাজার ৫১১। গত ১৯টি বিশ্বকাপের মধ্যে মাত্র৭টি আসরেই গড় দর্শক উপস্থিতি এরচেয়ে বেশি ছিলো।