এক বইয়ে অবৈধ বাণিজ্য সাড়ে ৬ কোটি টাকা!

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাদশশ্রেণির একটিমাত্র বই থেকেই এবার অন্তত সাড়ে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াররাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ওই শ্রেণির বাংলাপ্রথমপত্র বইটি সরকার ছেপে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এবার এর দায়িত্ব দেয়াহচ্ছে গাইড প্রকাশকদের। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, প্রকাশকরা মূল-বই বিক্রি করারদায়িত্ব পেলে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের গাইড গছিয়ে দেয়ার পন্থা বেছে নিতেপারেন। এতে জিম্মি হয়ে পড়বেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। ওই অবস্থায় অনেকেরইমূল-বই না পাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসবতথ্য।জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, একাদশশ্রেণিতে এবারও ইংরেজিসহ মোট ৮টি বই পুরনোই পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। এসব বইগতবছরই নতুন দেয়ার কথা ছিলো। বিপরীত দিকে পাণ্ডুলিপি রচনা শেষ হওয়ায় বাংলাপ্রথম পত্র ও বাংলা দ্রুত পঠন- এই বই দুটি এবার নতুন দেয়ার সম্ভাবনা তৈরিহয়েছে। কিন্তু ক্লাস শুরুর মাত্র ২৮দিন বাকি থাকায় শিক্ষার্থীদের বইটি পেতেবিলম্ব হতে পারে। কেননা, এ বই দুটির পাণ্ডুলিপিই এখন পর্যন্ত অনুমোদনহয়নি। যদিও এগুলো অনুমোদনের জন্য আজ জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) বৈঠক ডাকা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ১ জুলাই এই স্তরেরশিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। তাই বই দুটি আজ অনুমোদন পেলেও নানাপ্রক্রিয়া শেষে ক্লাস শুরুর আগে তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভাবনাকম।
এনসিটিবি তাদের প্রকাশিত বাংলা ও ইংরেজি বই নির্বাচিত এজেন্টদেরমাধ্যমে বিক্রি করে আসছিল।

জানা গেছে, এসব এজেন্টের অসহযোগিতা ওঅনীহার কারণে বাজারে সরকারি বই দুটির কৃত্রিম সংকট ছিলো। এর অন্যতম কারণছিলো, এসব এজেন্টের অনেকেই সারা দেশে বই বিক্রির ব্যবসার সাথে জড়িত। তারাএনসিটিবির তুলনায় নকল বই থেকে লাভের হার বেশি পেতেন। যে কারণে এনসিটিবির বইতারা বিক্রি করেননি। বিপরীত দিকে সরকার বাজারে পর্যাপ্ত বই সরবরাহ করতেব্যর্থ হওয়ায় সৃষ্ট সংকটকে পুঁজি করে সারা দেশেই অনেক পুস্তক ব্যবসায়ীশিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলে। গাইড না কিনলে মূল বই বিক্রি করেননি অনেকে।এমনকি নকল বইও অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। এসব কারণে এবার যদি হাতেগোনাকিছু প্রকাশকের হাতে মূল বই ছাপা ও বিক্রির দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে একদিকেনিজ নিজ প্রকাশনীর গাইড না কিনলে মূল বই বিক্রি না করার পুরনো পদ্ধতিঅনেকেই অনুসরণ করতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।

এবারএসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ জন।সাধারণত মাদরাসা-কলেজ নির্বিশেষে অভিন্ন বাংলা বই পড়ানো হয়। আর মূল বইয়েরসাথে গাইড কেনায় শিক্ষার্থী প্রতি যদি কমপক্ষে ৫শটাকা করেও নেয়া হয়, তাহলে অন্তত সাড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেবে সংশ্লিষ্টরা।

বইবিক্রিতে এ ধরনের সিন্ডিকেট না হওয়ার ব্যাপারে অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন পুস্তকপ্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরিচালক ও পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারীশ্যামল পাল। তিনি বলেন, এটা অমূলক। কেননা একটি বই যখন ১০ জনকে ছেপে বিক্রিরদায়িত্ব দেয়া হবে, তখন সিন্ডিকেট করার পথ থাকে না। বরং তখন প্রতিযোগিতারকারণে কে কার আগে বই বাজারে দেবে, সে ধরনের মানসিকতা কাজ করবে।আরএনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল যুগান্তরকেজানান, কাউকে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান করে দিতে তারা সরকারি বই প্রকাশকদেরমাধ্যমে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেননি। এনসিটিবি বহু বছর ধরেই উচ্চমাধ্যমিকে বাংলা ও ইংরেজি বাদে বাকি বইগুলো বেসরকারি প্রকাশকদের মাধ্যমেলিখিয়ে অনুমোদন দিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে আসছে। বাংলা-ইংরেজি এজেন্টদেরমাধ্যমে বিক্রি করা হতো। কিন্তু গেলো কয়েক বছর ধরে সরকারি বই দুটি বিক্রিকরা যাচ্ছিলো না। এর ফলে একশ্রেণীর প্রকাশক তা নকল করে বিক্রি করতো। নকল এবংনিম্নমানের বইও শিক্ষার্থীদের বেশি দামে কিনতে হতো। এ কারণে এবার এই বইপ্রকাশকদের মাধ্যমে ছাপিয়ে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানাগেছে, নতুন শিক্ষানীতির আলোকে রচিত কারিকুলামের আলোকে সরকারের বাংলা ওইংরেজি রচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুল হক বাংলাএবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল হকের নেতৃত্বে ইংরেজি বইপ্রণীত হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলার মূল সংকলন গতবছরই শেষ হয়। কিন্তু সৃজনশীলপ্রশ্নের নমুনা রচনায় বিলম্ব হওয়ায় গতবছর আর তা বাজারজাত হয়নি। জানা গেছে, এতে ৩০টি করে গল্প-প্রবন্ধ ও কবিতা স্থান পেয়েছে। এবারও দুটির পরিবর্তেএকটি করে উপন্যাস ও নাটক রাখা হচ্ছে। উপন্যাসটি হচ্ছে- সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ‘লালসালু’ আর নাটকটি সিকানদার আবু জাফরের ‘সিরাজউদ্দৌলা’। আর বিলম্বেপ্রস্তাব পাওয়ায় ইংরেজি বই রচনায় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইসলাম।পরে অবশ্য তিনি দায়িত্ব নেন। তবে সময় স্বল্পতার কারণে এটি লেখা শেষ হয়নি।

এপ্রসঙ্গে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জানান, ‘৩১ মার্চ আমাদেরবইয়ের পাণ্ডুলিপি দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কমিটির দু’জন সদস্য ব্যক্তিগতসমস্যার কারণে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেননি। তাছাড়া ভুলভ্রান্তিসহ বা মানহীনএকটি বই উপহার দেয়ার চেয়ে একটি সুন্দর ও অত্যাধুনিক বই উপহার দেয়ার জরুরিবলে আমরা মনে করছি। মূল বই রচনা শেষ। এখন সম্পাদনা চলছে। এটা করতে বাড়তি ৪মাস সময় প্রয়োজন। যে কারণে বাড়তি সময় নেয়া হয়েছে। জুলাই মাস নাগাদপাণ্ডুলিপি জমা দিতে পারবো বলে মনে করছি।’