ঘটনাস্থলে উপস্থিত টহল পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে :মিশনে অংশ নেয় তিন গডফাদারের ক্যাডাররা
স্টাফ রিপোর্টার:ফেনীর ফুলগাজীউপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে হত্যার মিশন চূড়ান্ত করা হয় এমপিনিজাম হাজারির বডিগার্ড জিয়াউল আলম ওরফে মিস্টার, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে জিহাদ চৌধুরীএবং আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর আব্দুল্লাহিল মাহমুদ শিবলুর তত্ত্বাবধানে।ঘটনার সময় সরাসরি মাঠ থেকে হত্যা মিশন মনিটর করেছিলেন জিহাদ চৌধুরী ওশিবলু। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ এবং গুলি করার প্রশিক্ষণ দেনজিহাদ চৌধুরী ও শিবলু। ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণসম্পাদক কাউন্সিলর শিবলু।এক সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি এবং আলোচিত গডফাদার জয়নাল হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরতার ক্যাডার ও কিলারবাহিনী বর্তমান এক এমপি ও সাবেক এক এমপির ছত্রছায়ায়তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। পরিকল্পনাকারীরা এমনভাবে মাস্টার প্লান করেছে যেফেনীর তিন গডফাদারের কিলার বাহিনীর সদস্যরা একত্রে একরাম হত্যার মিশনে অংশনেয়।
জানা গেছে, একরাম হত্যাকাণ্ডের আগের দিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাতপর্যন্ত ফেনী শহরের সালাম জিমনেশিয়ামের অভ্যন্তরে কিলারদের উপস্থিতিতেজিহাদ চৌধুরী ও কাউন্সিলর শিবলু হত্যাকাণ্ড চূড়ান্ত করেন। এর আগে থেকেএকরামকে হত্যা করার জন্য কয়েক দফা বৈঠক করা হয়। ফেনীর মতো একটি জেলা শহরেকিলার ও ক্যাডার বাহিনীর আনাগোনা এবং হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে পুলিশপ্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টির বাইরে ছিলো কথাটি ফেনীবাসীবিশ্বাস করতে পারছেন না। বর্বরোচিতভাবে একরামকে গুলি করে হত্যার পর তারগাড়িসহ লাশ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলার ঘটনা স্মরণকালে ঘটেনি। ঘটনাস্থলে খুনিরা২০ মিনিট অবস্থান করেছে। ওই সময় পুলিশের একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে টহলদলঘটনাস্থলের কাছে নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলো। ফেনী সদর থানা এলাকাটিঘটনাস্থল। প্রশাসনের বুকের ওপর নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি দীর্ঘসময় ধরে ঘটানোহলো কীভাবে?এ প্রশ্ন ফেনীবাসীর। একরাম হত্যাকাণ্ডে আগে এবং ঘটনার সময়পুলিশ প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গ্রেফতারের ব্যাপারেও পুলিশেরএকই অবস্থা।র্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে গতবৃহস্পতিবার গভীর রাতে একরাম হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও প্রথমগুলিবর্ষণকারী আবিদুল ইসলাম ওরফে আবিদসহ ৭ জনকে বারিধারা বসুন্ধরা আবাসিকএলাকার এইচ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত অপর ছয়জন হচ্ছেন জাহিদুল ইসলাম ওরফে সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিজউদ্দিন ওরফে অনিক, কাজী শানান মাহমুদ, মো. সাজ্জাদুল পাটোয়ারী ওরফেসিফাত, মো. শাহজালাল উদ্দিন ওরফে শিপন ও হেলাল উদ্দিন। পরবর্তীতে আবিদেরস্বীকারোক্তি অনুযায়ী একরাম হত্যার অন্যতম কিলার মো. জাহিদ হোসেনকের্যাব-৭ এর একটি দল গতকাল শনিবার ভোরে ফেনীর রামপুর এলাকা থেকে গ্রেফতারকরে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হেলাল জেনেশুনে একরাম হত্যাকারীদের আত্মগোপনেথাকতে সাহায্য করেছে। র্যাবের কাছে ৭ কিলার একরাম হত্যার পরিকল্পনা, অস্ত্রসরবরাহসহ হত্যা মিশন চূড়ান্ত করার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেছে।
যেভাবে হত্যার মিশনে খুনিরা অংশ নেয়: আবিদসহ৭ কিলার জানান, ৫টি গ্রুপে ৪০ জনের অধিক সশস্ত্র ক্যাডার হত্যাকাণ্ডে অংশনেয়। আবিদের ছোট ভাই আবিরের নেতৃত্বে গ্রুপটি উপজেলা চেয়ারম্যান একরামফেনী শহরের বাসা থেকে কখন বের হবেন সেই বিষয়টি ফলো করার দায়িত্ব নেয়।ঘটনাস্থলে হত্যার মিশন চূড়ান্ত করার দায়িত্ব নেয় ৪টি গ্রুপ। ঘটনার আগের দিন১৯ মে রাতে সালাম জিমনেশিয়ামে বসে জিহাদ চৌধুরী, মিস্টার ও কাউন্সিলরশিবলু কিলার গ্রুপের কার কি দায়িত্ব তা বণ্টন করে দেন। সঙ্গে অস্ত্র, রামদা, লাঠিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দেন তিনি। ৫টি মাইক্রোবাস ঘটনাস্থলেব্যবহারের জন্য পরিকল্পনাকারীরা দেয়। ঘটনাস্থল নির্ধারণ করা হয় শহরের কাছেএকাডেমী রোডে বিলাসী সিনেমাহলের সামনের এলাকাকে। এদিক দিয়েই একরামফুলগাজী উপজলা পরিষদে যান। দিন ঠিক করা হয় ২০ মে। কিলারদের যার যার গ্রুপঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অবস্থান নেয়। একটি গ্রুপ ফেনী শহরেরমাস্টার পাড়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের বাসভবনের অদূরে অপেক্ষায় থাকে।পৌনে ১১টায় একরাম তিন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে ফুলগাজী উপজেলার উদ্দেশেগাড়িতে উঠেন। আবিরের নেতৃত্বে গ্রুপটি ঘটনাস্থলে অপেক্ষমাণ গ্রুপেরনেতৃত্বদানকারীকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে একরাম ভাই রওয়ানা দিয়েছে। কিলারগ্রুপের সদস্যরা অস্ত্রসহ যার যার হাতিয়ার নিয়ে প্রস্তুত থাকে। বিলাসীসিনেমা হলের সামনে আসলে একরামের প্র্যাডো গাড়িটিকে নসিমন গাড়ি দিয়েব্যারিকেড দেয় তারা। একই সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং বোমা ফাটিয়ে এলাকায়আতঙ্ক ছড়ায় খুনিরা।
পুলিশেরআইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ফেনী সদরে একরাম হত্যাকাণ্ডে আগে পরেকিংবা ঘটনার সময় পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা হলে কঠোরব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয় তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে আইজিপি জানান।