স্টাফ রিপোর্টার:নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূরহোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামীমওসমান। নূর হোসেনের সাথে শামীম ওসমানের কথোপকথনের একটি অডিও প্রকাশিতহয়েছে। অপহরণের দু দিন পর ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে শামীম ওসমানকেফোন করেন নূর হোসেন। ১০৩ সেকেন্ড কথা হয় তাদের মধ্যে। শামীম ওসমানকে ফোনকরার সময় ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের আশপাশে ছিলো নূর হোসেনের অবস্থান৷ শামীমওসমানকে শুরুতে সালাম দেন নূর হোসেন। শামীম ওসমান বলেন, ‘খবরটা পৌঁছাইদিছিলাম, পাইছিলা?’ জবাবে নূর হোসেন বলেন, ‘পাইছি, ভাই।’ শামীম ওসমান বলেন, ‘তুমি অতো চিন্তা করো না।’ নূর হোসেন এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে শামীম ওসমানকেবলেন, ‘ভাই, আমি লেখাপড়া করিনি। আমার অনেক ভুল আছে। আপনি আমার বাপ লাগেন।আপনারে আমি অনেক ভালোবাসি, ভাই। আপনি আমারে একটু যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’ জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘একটু সময় দাও। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।’ শামীম ওসমান ‘গৌর দা’ বলে এক লোকের সাথে নূর হোসেনকে দেখা করতে বলেন।
নূরহোসেনের কাছে শামীম ওসমান জানতে চান, কোনো সিল আছে কি-না। সিল থাকার কথাজানিয়ে নূর হোসেন বলেন, ‘আছে আছে, সিল আছে, কিন্তু যামু ক্যামনে? যেভাবেবললো অ্যালার্ট। শামীম ওসমান বলেন, ‘না কিছু নেই। মনে হয় না। তুমি আগাইতেথাক।’ নূর হোসেন তখন বলেন, ভাই, তাহলে একটু খবর নেন। আমি আবার ফোন দেই।’
কথাবার্তারএকপর্যায়ে শামীম ওসমান নূর হোসেনকে বলেন, ‘তুমি কোনো অপরাধ করো নাই। আমিজানি, ঘটনা অন্য কেউ ঘটাইয়া এক ঢিলে দু পাখি মারতেছে।’ এ সময় শামীম ওসমাননূর হোসেনের কাছে জানতে চান, এ নম্বরটি নতুন কি না। নূর হোসেন ‘হ্যাঁসূচক’ জবাব দেন। শামীম ওসমান বলেন, তিনি নূর হোসেনকে তার আরেকটি নম্বরপাঠাবেন যোগাযোগের জন্য।
ফোনালাপের কথা স্বীকার করলেন শামীম ওসমান: নারায়ণগঞ্জের সাতজনকে খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সাথেফোনে কথা বলার কথা স্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সরকারি দলের এমপিশামীম ওসমান। তবে ওই ফোনে নূর হোসেনকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন, পালিয়েযেতে বলেননি বলে দাবি করেছেন তিনি।গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান এ দাবি করেন।বিভিন্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনের অংশবিশেষ থেকে পাঠকের জন্য খবরটি প্রচার করা হলো।
নূর হোসেন ও শামীম ওসমানের যে ফোনালাপ পত্রিকায় প্রচার হয়েছে সে সম্পর্কেনারায়ণগঞ্জের এ এমপি বলেন, ‘এটা একটি গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ড করাফোনালাপ। কারণটেলিফোন ট্র্যাকিং সাংবাদিকেরা করেন না, এটা করেন গোয়েন্দাসংস্থার লোকেরা। আমার ফোনও সব সময় ট্র্যাকিং করা হয়। এটা জেনেও আমি ফোনেকথা বলি।তিনি বলেন, প্রকাশিত ফোনালাপের পুরো কথা এখানে নেই। আংশিক আছে, আংশিক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের এ এমপি বলেন, ‘আমার সাথে ফোনে নূরহোসেন কথা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা জানতেন ওই সময় নূর হোসেনধানমন্ডি-৪ নম্বর রোডে আছেন।এ সময় শামীম ওসমান পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েবলেন, তারা (গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা) যদি জানতেন নূর হোসেন ধানমণ্ডিতেআছেন, তাহলে তারা নূর হোসেনকে ধরলেন না কেন?
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দনকুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর র্যাবের এক কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা হওয়া প্রসঙ্গ টেনে শামীম ওসমান বলেন, ‘তিনি (র্যাব কর্মকর্তা) আমাকে বলেন, আমরা না বাঁচলে আপনিও বাঁচবেন না।