ফিলিং স্টেশন অনার্স অ্যসোসিয়েশনের ধর্মঘটের আল্টিমেটাম : এএসআই প্রমাদসহ পুলিশের ৪ সদস্য ক্লোজ
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগরফিলিং স্টেশনে ডাকাতির সময় শুধু নৈশপ্রহরী নয়, পুলিশ পিকআপের চালককেও জিম্মি করে ডাকাতদল। ক্যাশে থাকা প্রায় আড়াই লাখ টাকা ডাকাতি করে পালানোর সময় প্রতিরোধের মুখে ডাকাতদল পর পর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা দুটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপরই ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী বিজিবির চেকপোস্টের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গত পরশু বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এ ডাকাতি সংঘটিত হয়।
জীবননগর থানার এএসআই প্রমাদসহ পুলিশের ৪ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। অপরদিকে ফিলিং স্টেশন ও ট্যাঙ্কলরি অনার অ্যাসোসিয়েশন ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়ে বলেছে, এ সময়ের মধ্যে ডাকাত গ্রেফতার ও ডাকাতি হওয়া টাকা উদ্ধার করা না হলে সোমবার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গার সকল ফিলিং স্টেশনে অনির্দিষ্টকারে ধর্মঘট শুরু করা হবে। ফিলিং স্টেশন ও ট্যাঙ্কলরি অনার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এ ঘোষণা দেন। অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মাহফুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মামুন অর রশীদ আঙ্গুরসহ নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে উপস্থিত সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এর আগে দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় ফিলিং স্টেশনে ডাকাতি হয়েছে। ফিলিংস্টেশনের মালিকের বাড়িতে ডাকাতদল তাণ্ডব চালিয়েছে। ডিঙ্গেদহের সীমান্ত ফিলিংস্টেশনে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে নৈশপ্রহরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। এসব ঘটনার রেশ মুছতে না মুছতে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ১৫/২০ জনের একদল ডাকাত ফিল্মিস্টাইলে হানা দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ডাকাতি করে পালিয়েছে। একের পর এক ডাকাতি চুয়াডাঙ্গার ফিলিং স্টেশনগুলোকে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছে। ইরিগেশনের ভরা মরসুমে আমরা কৃষককূলের ক্ষতি হবে জেনেও নিরুপায় হয়েই অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককেও জানানো হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ উপস্থিত সাংবাদিকদের অবগত করান।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শহরের কালীগঞ্জ সড়কে বিজিবি চেকপোস্টের অদূরে অবস্থিত জীবননগর ফিলিংস্টেশনে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। রাত ২টা দিকে মুখোশ পরিহিত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও বোমা হাতে ১৫-২০ জনের একদল ডাকাত ফিলিংস্টেশনটিতে হানা দিয়ে পুলিশের পিকআপ ড্রাইভার, ফিলিংস্টেশনের নৈশপ্রহরী, ফিলিংম্যান ও ম্যানেজারকে জিম্মি করে ক্যাশ লুট করে। পলায়নকালে প্রতিরোধে এগিয়ে আসা পুলিশের উদ্দেশে বোমা নিক্ষেপ করে ডাকাতদল নির্বিঘ্নেপালিয়ে যায়। এঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশ ব্যাপক অভিযান শুরু করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে জীবননগর থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশেল গোয়েন্দা দল ডাকাতদল শনাক্ত করে গ্রেফতারের নানামুখি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
ফিলিংস্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল জলিল ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ঘটনার ৫ মিনিট আগে জীবননগর থানা টহলপার্টির একটি পিকআপ ফিলিংস্টেশনে আসে। পরে ফিলিংস্টেশনের অদূরে মহাসড়কে ওপর পিকআপ রেখে ড্রাইভার তার নিকট আসেন পেট্রোল নেয়ার ইনডেন্ট ফর্ম নিতে। ইনডেন্ট ফর্ম নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সশস্ত্র ডাকাতদল ফিলিংস্টেশনটিতে হানা দেয়। এসময় তারা ফিলিংস্টেশনের নৈশপ্রহরী শাহাদৎ হোসেন ও ফিলিংম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে বেঁধে মারপিট করে এবং তাদের কাছে থাকা মোবাইলফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা এসময় পুলিশের পিকআপ ড্রাইভারকেও জিম্মি করে। পরে তারা ফিলিংস্টেশন ম্যানেজারের রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ক্যাশ থেকেদু লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৬ টাকা লুট করে। ডাকাতির শেষ মুহূর্তে পিকআপ ভ্যান থেকে পুলিশ ও ফিলিংস্টেশনের ২শ গজ অদূরে অবস্থিত জীবননগর সীমান্ত ফাঁড়ি বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিজিবি সদস্যরা ডাকাতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। ডাকাতদল এসময় পুলিশের উদ্দেশে শক্তিশালী একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুটকৃত টাকা ও মালামালসহ ফিলিং স্টেশনের পেছনের মাঠ দিয়ে বাঁকা গ্রামের দিকে নির্বিঘ্নেপালিয়ে যায়।
ফিলিংস্টেশন ম্যানেজার অভিযোগ করে বলেন, ডাকাতিকালে এএসআই প্রসাদের নেতৃত্বে থানার টহল পিকআপ ফিলিং স্টেশনের প্রবেশের মুখে দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি ডাকাতি প্রতিরোধে সময়মতো এগিয়ে আসেননি। এলে ডাকাতদল ব্যর্থ হতো বলে তিনি অভিযোগ করেন। জীবননগর উপজেলার বাঁকা, হাসাদাহ, তারানিবাস, করিমপুর, বলিহুদা এলাকাবাসী ব্যাপক ডাকাতি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রামে ডাকাতদল হানা দিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে। এলাকাবাসী এলাকায় পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরালো করার দাবি জানিয়েছে।