সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডঅশনি সঙ্কেত : সতর্ক হতে হবে

 

সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ২২ ও ২৩ এর ছিলা এলাকায় গতকাল শুক্রবারওথেমে থেমে জ্বলছে আগুন। গত তিন দিন ধরে জ্বলা এ আগুন সম্পূর্ণনিয়ন্ত্রণে না আসার খবর উদ্বেগজনক। যদিও দমকলকর্মীরা বলছেন আগুন এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেরয়েছে।ইতোমধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় ১০ একর বন। অগ্নিকাণ্ডেসুন্দরবন বিভাগের গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই তাদেরতদন্ত কাজ শুরু করেছে। গত বুধবার বিকেল থেকে শুরু হওয়াআগুন নেভানোর কাজ গতকাল শুক্রবারও চলেছে। বিকেলেও ওই এলাকায় গাছের নিচের অংশেআগুনের সন্ধান পেয়েছেন দমকল কর্মীরা। আগুনে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ একর বনভূমিরসুন্দরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পুড়ে গেছে।

সুন্দরবন দেশের প্রধান বনাঞ্চল। একে যেকোনো উপায়ে রক্ষাকরতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে বনের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য পড়েছে নিশ্চিতহুমকির মুখে। গতপরশু ছিলো আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। সুন্দরবন ভেতর ও বাইরে থেকেআক্রান্ত হয়ে সার্বিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন। জলবায়ুর অব্যাহত বৈরি আচরণ যেমন, তেমনি এ বনকে ঘিরে যাদের জীবন ও জীবিকা, তাদের অমানবিক কর্মতৎপরতাও এঅবস্থার জন্য দায়ী। বনকে লালন করে যাদের সুখি-সমৃদ্ধ হওয়ার কথা, তারা বনকেবিরান করে সম্পদশালী হওয়ার প্রতিযোগিতায় ধ্বংসযজ্ঞে অবতীর্ণ হয়ে কেবলসুন্দরবনকেই বিপন্ন করছে না, বিপন্ন করে তুলেছে নিজেদের, পাশাপাশি দেশেরমানুষদেরও। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯সালের ২৫ মে’র জলোচ্ছ্বাস আইলার প্রলয় থেকে উপকূলীয় জনপদকে বাঁচিয়েছে যেবনভূমি, সেই সুন্দরবনকে যথাযথ মর্যাদা না দেয়ায় তা এখন বিপর্যয়ের মুখে।

সুন্দরবনেলবণাক্ততার বিস্তৃতি এবং বনজীবী মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মতৎপরতার ফলে এরপ্রাণিকুল অসহায় হয়ে পড়েছে। বদলে যাচ্ছে এদের আচরণ। হিংস্র হয়ে উঠেছে রয়েলবেঙ্গল টাইগারগুলো। যে বনভূমিকে পশু ও প্রাণিদের জন্য আমাদের অভয়ারণ্যরূপে গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিলো, সেই বনভূমিকেই আমরা ঠিকমতো পরিচর্যা করছি না।ফলে এ বন যে বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন তারইঅশনি সঙ্কেত। এ ব্যাপারে এখনই আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের তৎপর হতে হবেযেমন এ আগুন নেভাতে, তেমনি সুন্দরবনকে সর্বোচ্চ পরিচর্যা দিয়ে রক্ষাকরতে। সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত সুন্দরবনকে মানব বিধ্বস্ত সুন্দরবন হওয়া থেকেরক্ষা করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের।