মেহেরপুর অফিস: অপহরণের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি মেহেরপুরে অপহৃত ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আতাউর রহমান। শুভরাজপুর গ্রামে মঙ্গলবার গভীররাতে স্কুল শিক্ষক নানাকে বোমা মেরে হত্যা করে তাকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরিবারে এখন শুধুই শোকের মাতম আর এলাকাজুড়ে অজানা আতঙ্ক। আতাউরকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছে তার পরিবার।
সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতেই বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আতাউরের পিতা কুতুবপুর গ্রামের আলিফ হোসেন। দু ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী ছামেনা খাতুন পার্শ্ববর্তী শুভরাজপুর গ্রামে পিতা আব্দুস সালামের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। ছামেনা খাতুনের কাছে মাস চারেক আগে দু লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। পরিশোধ না করায় গেল মঙ্গলবার গভীররাতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হানা দিয়ে আতাউরকে অপহরণ করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমাঘাতে নিহত হন আতাউরের নানার ভাই স্কুল শিক্ষক আব্দুল হালিম। পরদিন নিহতের আরেক ভাই আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি স্কুলছাত্র। গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি। তাই স্বজন হারিয়ে গোটা পরিবারে শোকের পাশাপাশি বিরাজ করছে আতঙ্ক। শুধু ভুক্তভোগীদের পরিবারেই নয় সীমান্তবাসীদের মাঝে অনেক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে অপহৃতের স্বজন ও এলাকার বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, শুভরাজপুর গ্রাম থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে ভারতীয় কাটাতারের বেড়া। সন্ত্রাসীরা আতাউরকে নিয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছে বলে পরিবার ও এলাকার মানুষের দাবি। ঘটনার দিন সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড, তাদের অস্ত্রসস্ত্র ও বিভিন্ন বিষয় থেকে পরিবারের লোকজন এমন দাবি করছেন। কেননা ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই সীমান্তসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশিদের অপহরণ করে ভারতে নিয়ে যেত। পরে মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এদের মধ্যে এখনও নিখোঁজ রয়েছে কুলবাড়ীয়া গ্রামের এক শিশু। গত কয়েক বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিরবে চাঁদা পরিশোধ করেছেন অনেকেই। দু দেশের সীমান্ত এলাকার কিছু সন্ত্রাসী মিলে মূলত এ কাজ করতো বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে। তবে মেহেরপুর পুলিশ সুপার এ.কে.এম নাহিদুল ইসলাম জানালেন, আতাউরকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সীমান্তের এ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় মানুষ দাবি করেছেন, বিজিবি সদস্যদের আরও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।