চুয়াডাঙ্গা বেলগাছির প্রবাসফেরত আতিক নিহত : নববধূসহ আহত ৩৫

লেট ফি রক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীবাহী মডার্ন পরিবহনের বাস দুর্ঘটনার কবলে : বাস মোটরসাইকেল করিমন ত্রিমুখি সংঘর্ষ

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল/নজরুল ইসলাম: যাত্রীবাহী মডার্ন পরিবহন লেট ফি রক্ষা করতে গিয়ে কেড়ে নিলো এক তরতাজা যুবকের প্রাণ। জীবননগর থেকে ছেড়ে আসা মডার্ন পরিবহনেরনিচে চাপা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেলচালক চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি ঈদগাপাড়ার সিঙ্গাপুর ফেরত যুবক আতিকের। আতিকের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা তার নববধূ অনন্যার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দর্শনা আকন্দবাড়িয়া তমালতলাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাস, করিমন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অনন্যাসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জন। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। পুলিশ আতিকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া করিমন ও আতিকের মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাস উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলে। চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের যাত্রীবাহী বাসগুলো যেখান সেখান থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া সময় অতিক্রম করে ফেলে চালকরা। এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নির্ধারিত সময় অতিক্রম করলে চালকদের গুনতে হয় লেট ফি। লেট ফি থেকে রক্ষা পেতে বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে সময় পুষিয়ে নিতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাস। ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অনেকেই। একই কারণেদুর্ঘটনা ঘটলো দর্শনা-জীবননগর মহাসড়কের আকন্দবাড়িয়া তমালতলাপাড়ায়।

প্রত্যক্ষদর্শী, বাসের যাত্রী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জীবননগর থেকে দর্শনার উদ্দেশে মডার্ন পরিবহনের একটি (যশোর-জ-১১-০০৪৭) যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। দর্শনার নিকটবর্তীআকন্দবাড়িয়া তমালতলা নামক স্থানে পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে আসছিলো যাত্রীবাহী করিমন। একই সময় মোটরসাইকেলযোগে নববধূ অনন্যাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি গ্রামের যুবক আতিক।যাত্রীবাহী বাসটি দ্রুতগতিতে করিমনকে পাশ কাটিয়ে অতিক্রম করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। বাসচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ডানপাশে উল্টে যায় বাসটি। চালক ও হেলপার কৌশলে পালিয়ে গেলেও বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি ঈদগাপাড়ার সদ্য সিঙ্গাপুর ফেরত আতিকুর রহমান ওরফে আতিক। স্থানীয় লোকজন আতিকের স্ত্রী অনন্যাকে বাসের নিচ থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় বাসের ভেতর ও নিচ থেকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুরের আব্দুল মালেক ও তার ছেলে নিশান, দর্শনা পরানপুরের নাসির জোয়ার্দ্দার, যশোর বাঘারপাড়া শ্রীরামপুরের শাজাহান, আজমপুরের আকবর আলী, খয়েরহুদার আবু হাসনাতসহ কমপক্ষে ৩৫ জনকে। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় দর্শনার ক্লিনিকগুলোসহ দামুড়হুদার চিৎলা ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে অনন্যাসহ অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

এদিকে অনন্যার অবস্থার অবনতি দেখা দিলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় নেয়া হয়েছে। নিহত আতিক মাস তিনেক আগে বিয়ে করেন মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের শ্যামকুড় খন্দকারপাড়ার রবিউল মেম্বারের মেয়ে অনন্যাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেলযোগে নববধূকে সাথে নিয়ে আতিক শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। সড়ক দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শ শ মানুষ ভিড় জমায় ঘটনাস্থলে। পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দর্শনা আইসি ইনচার্জ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলেও দীর্ঘসময়ের মধ্যে বেগমপুর ফাঁড়ি পুলিশকে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ উদ্ধার করে আতিকের লাশ।দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল ও করিমন উদ্ধার করা হয়। গতরাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়উল্টে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছিলো বলে পুলিশ জানায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কেউ মামলা দায়ের করেছে কি-না জানা যায়নি।