সৌদিআরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশি ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ফার্নিচারকারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ বাংলাদেশিসহ অন্তত ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটিবেদনাদায়ক। প্রবাসে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগেও ঘটেছে। প্রায় দেড় বছর আগেসংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ছয় বাংলাদেশি শ্রমিক। এঘটনার পাঁচ মাস আগে বাহরাইনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১৩ জন। এছাড়া আমিরাতেরদুবাইয়ে ২০১০ সালে অগ্নিকাণ্ডে চার বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হন।মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই বিভিন্ন দুর্ঘনায় প্রবাসীবাংলাদেশি শ্রমিকরা প্রাণ হারাচ্ছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক। প্রবাসী শ্রমিকরাকর্মস্থলে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার পর তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণপাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে সরকারের আরও সক্রিয়ভূমিকা কাম্য। বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরতবাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের সদস্যদেরমুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা জমিজমা বিক্রি কিংবা ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়িজমান। এ অবস্থায় দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে তার পরিবার নিতান্তই অসহায়বোধকরে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশে কোনো বাংলাদেশি শ্রমিকেরমৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা লাশ আসার অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুরু করেন। লাশপাওয়ার পর দাফন শেষে তাদের প্রতীক্ষা থাকে- কবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়াযাবে?তবে দুঃখজনক হলো-অধিকাংশ নিহতের পরিবারেরই ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ারপ্রত্যাশা পূরণ হয় না। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী কোনো বিদেশি শ্রমিক সেখানেকর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেলে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণহিসেবে দু লাখ রিয়াল দেয়া হয়, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৪ লাখ টাকা।দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণের এ টাকা পায়, তানিশ্চিত করা উচিত। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা আরউদাসীনতার কারণে সৌদি সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকেক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য সৌদি আরবেদুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার ক্ষতিপূরণ পেতে হলে বেশকিছু নিয়ম-কানুনের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় এক কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায়অবৈধভাবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আগের কোম্পানি ক্ষতিপূরণদেয় না। এ জটিলতা এড়াতে বাংলাদেশ থেকে কেউ যাতে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি নাজমায়, সেদিকে সরকারের মনোযোগ বাড়াতে হবে।
আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির পরইপ্রবাসী আয়ের স্থান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক বিদেশগামী ও তাদের পরিবারপ্রতারণা, হয়রানি কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষারদায়িত্ব সরকারের। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের পরিবারেরকল্যাণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।