মহাসিন আলী: মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় নারকেল গাছে মড়ক লেগেছে। ইতোমধ্যে দুসহস্রাধিক নারকেল গাছ মরে গেছে। আরো অনেক নারকেল গাছ পাতা শুকিয়ে মরতে বসেছে। অজ্ঞাত রোগে নারকেল গাছ মারা যাচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন পরিবেশ দূষণ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে গাছের পরিচর্চা এবং ছত্রাক ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে গাছ মারা যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেরপুর শহরের ভূমি অফিসপাড়ার বাবু মণ্ডলের একটি, বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত আব্দুস সালামের একটিসহ মেহেরপুর পৌর এলাকার শতাধিক নারকেল গাছ মারা গেছে। গাছগুলো কেটে ফেলার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে মালিকরা জানিয়েছেন। গাংনী পৌরসভাধীন পূর্ব মালসাদহ গ্রামে অর্ধ শতাধিক নারকেল গাছ মারা গেছে। ওই গ্রামের আয়ুব আলীর ২টি নারকেল গাছের পাতা শুকিয়ে মারা গেলে গাছ দুটি কেটে ফেলা হয়েছে। তারই প্রতিবেশী জামালউদ্দীনের ৩টি গাছ, মোমিন মিয়ার ২টি, ইয়াছিন আলীর ৪টি ও ঠাণ্ডু মিয়ার একটি গাছ মারা গেছে। বাকি গাছগুলো মরা যাওয়ার উপক্রম। অন্যদিকে জীবিত গাছগুলোর নারকেল শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। নারকেল গাছ মারা যাওয়ার এমন আরো তথ্য জানিয়েছেন মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানালেন, পূর্ণ বয়স্ক নারকেল গাছের আগার পাতা প্রথমে শুকানো শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সব পাতাগুলো শুকিয়ে গাছ মারা যাচ্ছে। তবে কোনো পোকার উপস্থিতি টের পায়নি তারা। গ্রামের মানুষজন অজ্ঞতাবশত গাছের ওই মড়কের জন্য মোবাইলের টাউয়ারকে দায়ী করে প্রতিকারের জন্য কোনো চেষ্টা করছেন না। আবার কেউ কেউ ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার এনএ হালিম জানান, এটা নারকেল গাছের আগামরা রোগ হতে পারে। ডাবের ওপর ধূসর রঙ ধারণ করলে ধরে নেয়া যায় ফাঙাস রোগ হয়েছে। ফাঙাস ইনফেকশন হলে কচিপাতা মারা যায়। আবার মাজরা পোকার মতো বড় বড় পোকা নারকেল গাছের কচিপাতা গাছের মাথার ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। এতে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়। ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে গাছের মাথায় ও পাতায় কমপক্ষে ৩ বার ছত্রাক ও কীট নাশক স্প্রে করে এরোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়া কয়েক মাস অন্তর নারকেল গাছের গোড়া থেকে ২ ফুট পর্যন্ত চারদিকে চুনের প্রলেপ দিতে হবে। এতে নারকেল গাছ মারা যাওয়া থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীরা শুধু ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী না করে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে গাছ মারা যাওয়া অনেকাংশে কমাতে পারেন।